মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

ইজারা ছাড়াই লিল্লাহি বোর্ডিংয়ের নামে হাটের খাজনা আদায়ের অভিযোগ

আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:০০

নওগাঁর নিয়ামতপুরে ২০ বছর ধরে সপ্তাহে দুই দিন কাঁচাবাজারসহ ছাগলের হাট বসলেও সরকারিভাবে হাট ইজারা না নিয়ে খাজনা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সিন্ডিকেট সদস্যদের বিরুদ্ধে। এর মূল হোতা হিসেবে বরেন্দ্র আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আতিকুর ইসলামের দিকে আঙুল তুলছে অভিযোগকারীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সরকারিভাবে এ হাট ইজারা দেওয়া না হলেও স্থানীয় কিছু অসাধু সিন্ডিকেট দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ইচ্ছামতো খাজনা আদায় অব্যাহত রেখেছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। উপজেলা প্রশাসনের তালিকায় এ হাট অন্তর্ভুক্ত করে সরকারিভাবে ইজারা দেওয়ার দাবি করেছেন ব্যবসায়ী এবং এলাকাবাসী। তবে প্রশাসন বলেছে, আইনগত কিছু সমস্যা থাকায়, বরেন্দ্র হাট তালিকাভুক্ত করা যাচ্ছে না।

আরও জানা যায়, পশুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ে কেউ প্রতিবাদ করলে খাজনা আদায়কারী বাহিনীরা ঘরের মধ্যে তুলে সেই ব্যক্তিকে নির্যাতন করে। এ হাট থেকে গড়ে প্রতি বছর ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খাজনা আদায় হয়। পুরো টাকাই নামধারী ইজারাদার আতিকুর ইসলামের পকেটে যায়। অথচ সরকার এ হাটের ইজারা থেকে বঞ্চিত। গত ২০ বছরে এ হাট থেকে কমপক্ষে কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২০০৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নিয়ামতপুর-ধানসুরা আড্ডা আঞ্চলিক সড়কের রাস্তার দুই ধারে বরেন্দ্র আলিম মাদ্রাসার লিল্লাহি বোর্ডিংয়ের সৌজন্যে কাঁচা বাজার ও পশুর হাট বসানো হয়। এরপর প্রতি সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার ওই স্থানে হাট বসে। তবে বরেন্দ্র আলিম মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পন্থায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আতিকুর ইসলাম হাটের চাঁদা ও খাজনা আদায় করে নিজের পকেটে রেখে দেয়। বরেন্দ্র আলিম মাদ্রাসার ৮ থেকে ১০ বিঘা ধানী জমিও রয়েছে। অথচ অত্র মাদ্রাসার তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি।

শবিবার (২০ এপ্রিল) ছিল হাটবার। সরেজমিনে বরেন্দ্র হাটে গিয়ে দেখা যায়, বরেন্দ্র আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক ইসমাইল হোসেন হাটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করেন। কথা হয় তার সঙ্গে।

তিনি বলেন, ছাগলের খাজনা আদায় করা হচ্ছে। এছাড়াও হাটে হকারদের কাছ থেকে ১০ টাকা ও মাছ বাজার, কাঁচা বাজারসহ অন্যন্যা দোকানগুলো থেকে ১০ থেকে ২০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরেন্দ্র হাটের এক ব্যবসায়ী বলেন, বরেন্দ্র আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আতিকুর ইসলাম এই হাটের খাজনা আদায় করে তিনি নিজ পকেটে রেখে দেন। এই হাট থেকে সরকার বছরের পর বছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

বটতলী হাটের ইজারাদার সেলিম উদ্দীন বলেন, বরেন্দ্র হাটে ছাগলের হাট বসলে আমাদের হাটে ওই এলাকা থেকে তেমন কোন ছাগল আসে না। ফলে পাশ্ববর্তী হাট বসায় আমরা বিপাকে রয়েছে।

বরেন্দ্র হাটের নামধারী ইজারাদার ও বরেন্দ্র আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আতিকুর ইসলাম বলেন, মাদ্রাসার এতিম বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্য এবং মাদ্রাসার উন্নয়নে এসব টাকা খরচ করা হয়। হাটে ছাগলের অতিরিক্ত খাজনা আদায় নিয়ে প্রশ্ন করলে সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন আপনার যা ইচ্ছা হয় তাই লিখেন। আপনারা আমার কিছুই করতে পারবেন না।

শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, বরেন্দ্র হাট ইজারা না দেওয়ায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ইউএনও সঙ্গে কথা বলে যত দ্রুত সম্ভব হাটটি ইজারার আওতায় আনা হবে।

নিয়ামতপুর ইউএনও ইমতিয়াজ মোরশেদ বলেন, বেশ কিছু জটিলতার কারণে হয়তো হাট ইজারা দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমি এই বিষয়ে অবগত হওয়ার পর উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। যত দ্রুত সম্ভব হাটটি ইজারা দেওয়া হবে।

ইত্তেফাক/এসজেড