মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

মার্কিন মুল্লুকে বাংলাদেশকে বরণ করতে প্রস্তুত প্রিন্স

‘আমি তো যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটের পক্ষ থেকে আছি, থাকব।’ আপনি বাংলাদেশের জন্য কী করবেন? হাসতে হাসতে প্রিন্স বললেন, ‘একটা কিছু তো করতে হবে। ওরা যেন হিউস্টন থেকে হাসিমুখে বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু করতে পারে।’ বোঝাই যায়—বাংলাদেশকে বরণ করতে প্রস্তুত প্রিন্স।

আপডেট : ০৮ মে ২০২৪, ১৮:৫৫

মার্কিন মুল্লুকে ক্রিকেট উন্নয়নে একজন বাংলাদেশি কাজ করছেন। এদেশের জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার গোলাম নওশের প্রিন্স। কাজ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেটে। দুই বছর আগে যোগ দিয়েছেন এখানে। দুই বছর মেয়াদ শেষ হয়েছে দুই দিন আগে। গোলাম নওশের প্রিন্সকে আবারও দুই বছরের জন্য দায়িত্ব দিয়েছে ইউএস ক্রিকেট। যাদের পারফরম্যান্স ভালো হয় তাদের মূল্যায়ন করে ইউএস ক্রিকেট। গোলাম নওশের প্রিন্স ক্রিকেট অপারেশন্সসের দায়িত্ব পালন করছেন। মার্কিন মুল্লুকের ক্রিকেট গোছানোর অন্যতম গুরুদায়িত্ব বাংলার ছেলে প্রিন্সের।

আশির দশকে দেশের ক্রিকেটে সেরা পেসার ছিলেন প্রিন্স। ৮৪-৯৪ পর্যন্ত জাতীয় দলে খেলেছেন। বাঁহাতি পেস বোলার প্রিন্সের উত্থান হয়েছিল ইয়ংপেগাস থেকে। মোহামেডান-আবাহনীতে খেলে লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন এবং এই দলের হয়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। দেশের বাইরে হংকংয়ে বাংলাদেশের প্রথম ট্রফি জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রথম ওয়ানডে স্কোয়াডে ছিলেন গোলাম নওশের প্রিন্স। শারজায় অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসরে খেলে বোলিংয়ে সূচনা করেছিলেন প্রিন্স। যেখানে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড খেলেছিল। এছাড়াও আইসিসি ট্রফি, এশিয়া কাপ ক্রিকেটসহ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের বোলিংয়ে বড় অস্ত্র ছিলেন প্রিন্স। তার বলের সুইং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করত। ইংল্যান্ডে ক্লাব ক্রিকেটে খেলেছেন তিনি। পরবর্তী সময়ে খেলা ছেড়ে সিলেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান প্রিন্স।

এবার বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টি হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশ খেলতে যাবে। রোমাঞ্চিত প্রিন্স। মূল লড়াইয়ে নামার আগে বাংলাদেশ তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে। খেলা হবে হিউস্টনে। প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে হিউস্টন থেকে ডালাস যাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। হিউস্টন শহরের  ক্রিকেট উন্নয়নে কাজ করছেন প্রিন্স, বসবাসও এখানে। গতকাল যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রিন্স বললেন, ‘বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি ম্যাচের জন্য সব কিছু প্রস্তুত করা হয়েছে। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকছে। প্র্যাকটিস মাঠ রেডি, ইনডোর রেডি। আমার বাসা থেকে ২০ মাইল দূরে প্রায় ৯০ একর জমির ওপর সাজিয়ে তোলা হয়েছে ক্রিকেটের আধুনিক মাঠ। ৭টা পিচ আছে, প্রায় আড়াই হাজার দর্শক খেলা দেখতে পারবেন— এমন আসন ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’ তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচের টিকিট রাখা হতে পারে।

বাংলাদেশের আয়তনে ৫টা দেশের সমান হিউস্টন। অন্যতম মেগা সিটি বলা হয় এটিকে। ক্রিকেটের উন্মাদনা আছে হিউস্টনেও, জানিয়েছেন প্রিন্স। তিনি বলেন, ‘৫০ হাজার বাঙালি আছেন এখানে। তারপরও দূরদূরান্ত থেকে প্রস্তুতি ম্যাচ দেখতে আসবেন আরো বাংলাদেশি।’ 

বাংলাদেশ খেলতে যাবে হিউস্টনে। দেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখা হবে প্রিন্সের। ক্রিকেট অপারেসন্সের দায়িত্ব পালনকারী পাঁচ জনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এক জন বাংলাদেশের সুদর্শন ক্রিকেটার প্রিন্স। অনেক দিন পর বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখা হতে যাচ্ছে তার। এমন এক পরিস্থিতিতে দেখা হবে যখন প্রিন্স নিজেই যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটের প্রতিনিধি। বুকের মধ্যে লাল-সবুজের ভালোবাসা ফুটছে। তর সইছে না, কখন দেখবেন বাংলাদেশকে। ‘আমি তো যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটের পক্ষ থেকে আছি, থাকব।’ আপনি বাংলাদেশের জন্য কী করবেন? হাসতে হাসতে প্রিন্স বললেন, ‘একটু কিছু তো করতে হবে। ওরা যেন হিউস্টন থেকে হাসিমুখে বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু করতে পারে।’ বোঝাই যায়—বাংলাদেশকে বরণ করতে প্রস্তুত প্রিন্স।

দুদিন আগে সাকিব আল হাসান বলেছেন, জিম্বাবুয়ে ও যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে লাভ নেই। এ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে চাইলে প্রিন্স বলেন, ‘নো কমেন্টস। আমি বিষয়টা জানি না। বলতে পারব না।’ 

যুক্তরাষ্ট্র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হবে, মার্কিন মুল্লুকে ক্রিকেট উত্তেজনা টের পাচ্ছেন প্রিন্স। ড্রপিং পিচ, স্টেডিয়াম নির্মাণ করলেও সেটি বিশ্বকাপের পর খুলে নেওয়া হবে। সবকিছুই মান বজায় রেখে করা হচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জানালেন প্রিন্স। বললেন, ‘আইসিসি সব করছে। তারা মান ঠিক রাখতে কড়া নজর রাখছে।’ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। প্রিন্স শুনেছেন টিকিটের অনেক দাম। ভারত-পাকিস্তানের টিকিট কয়েক হাজার ডলারে কিনতে চাইছেন দর্শক। বাংলাদেশের দুই ম্যাচের টিকিটও পাওয়া যাচ্ছে না।’ প্রিন্স বলছিলেন, ‘আমি তো টিকিটের সঠিক প্রাইস জানি না। শুনছি ৭০ ডলারের টিকিট ৩০০ ডলারে কিনেছেন কেউ কেউ।’

ইত্তেফাক/জেডএইচডি