সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

সুখেই আছেন ব্রাদার্স কর্তারা, দুঃখে খেলোয়াড়রা

আপডেট : ০৯ মে ২০২৪, ১৭:১৮

পয়েন্ট টেবিলে ব্রাদার্সের অবস্থান ১০ দলের মধ্যে দশম। ১৩ ম্যাচ পর প্রথম জয়ের মুখ দেখেছে ১৪ নম্বর খেলায়। ১ জয় ৩ ড্র, ১০ ম্যাচ হেরেছে। ১৭ গোল করেছে, ৫৩ গোল হজম করেছে। লিগ কমিটি জানিয়েছে প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ থেকে একটি দল রেলিগেশন হবে—একথা শুনে চোখে ঘুম নেই ব্রাদার্স ইউনিয়নের ফুটবলারদের। কর্মকর্তারা নির্বিকার। অপ্রত্যাশিত কিছু না ঘটলে রেলিগেশন নিশ্চিত, ধরেই নিচ্ছেন ফুটবলাররা। 

জানা যায়, ব্রাদার্স কর্মকর্তারা কেউ ক্লাবেই যান না; খোঁজও নেন না। অনুশীলনে মাঠে কোনো কর্মকর্তাই যান না। ম্যাচের দিন ম্যানেজার আমের খান আসেন। খেলা শেষে তিনি চলে যান। গাম্বিয়ান কোচ তার পছন্দের ফুটবলার নিয়ে একাদশ সাজান। সেখানেও আছে নিজের পছন্দ-অপছন্দ। মোহামেডানের কাছে ৮-০ গোলের হারের পরও টেনশন ছিল না কোচের। কর্মকর্তারাও খোঁজ নেননি। খেলোয়াড়দের কণ্ঠে রাজ্যের হতাশা। পারিশ্রমিক পান না খেলোয়াড়রা। ঈদের সময় ৩ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। শেখ জামালের বিপক্ষে অপ্রত্যাশিত জয়ে আমের খান ৫০ হাজার টাকা বোনাস দিয়েছেন। খেলোয়াড়রা মাথাপিছু ১ হাজার ৪০০ টাকা পেয়েছেন। 

লিগের প্রথম পর্ব শেষে একাধিক ফুটবলার দল ছেড়ে চলে গেছেন। বাফুফের এলিট একাডেমির পাঁচ ফুটবলার খেলেছেন, বসুন্ধরা কিংস থেকে জুনিয়র ফুটবলার দেওয়া হয়েছে। কাউকেই পারিশ্রমিক দিতে হচ্ছে না। বিনা পারিশ্রমিকে তারা খেলছে। খেলোয়াড়দের রুমে রুমে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ময়লা-আবর্জনার মধ্যে তাদের বসবাস। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে থাকতে হয়। রুমে ঢুকলে দম বন্ধ হয়ে যাবার জোগাড়। কীভাবে থাকছেন খেলোয়াড়রা? তাদের কণ্ঠে কথা নেই। হতাশ। খাওয়া-দাওয়া প্রতিদিন একই রকম। উন্নত মানের খাবার নেই। অনেক খেলোয়াড়কে দেখা গেছে, তারা অনুশীলন শেষে দোকান থেকে খাবার কিনে খাচ্ছেন। 

ক্লাবের মসজিদের হুজুর, ফারুক নাম। তিনি ক্লাবের দেখাশোনা করেন বলে খেলোয়াড়দের দাবি। ফারুকের নিজের দোকান আছে ক্লাবের গেটের কাছে। বাকিতে মুদি মালামাল সরবরাহ করেন। নিজেই খাবার ব্যবস্থাপনায় নির্দেশনা দেন। তপ্ত গরমে থাকা কঠিন, গরমের মধ্যে নাভিশ্বাস উঠলেও বাফুফের এলিট একাডেমি থেকে আসা পাঁচ ফুটবলার প্রচণ্ড গরমে ঘুমাচ্ছেন কম্বল গায়ে। এলিটের ফুটবলাররা বললেন, ‘আমাদেরকে এই রুমে রাখা হয়েছে। এসি আছে।’ অন্য আরেকটি রুমের ফুটবলাররা বললেন, ‘সারা দিন গরম থাকলেও রাতে একটু কমে। অন্য একটি রুমে খেলোয়াড়রা নিজেরাই এসি ভাড়া করে এনেছেন।’ খেলোয়াড়রা বলেন, ‘ক্লাবের সভাপতি নজরুল ইসলামও খোঁজখবর নেন না। তিনি রাজনীতিতে ব্যস্ত। এই ক্লাবের সব কর্মকর্তাই সুখেই আছেন, আমরা খেলোয়াড়রাই আছি দুঃখে।’

ব্রাদার্সের ডাইরেক্টর ইনচার্জ মহিউদ্দিন মহি বললেন, ‘কেউ চ্যাম্পিয়ন হবে, কেউ রেলিগেশন হবে এটাই তো নিয়ম। মাঠে তো আমরা খেলি না। জিতলে মাঠে যেতাম। জেতা দলের সঙ্গে সবাই থাকে। হারলে কেউ পাশে থাকে না—এই কথাগুলো অভিমানে বলছি। কষ্ট নিয়ে বলছি। আমরা কয়জন মিলে ক্লাবটাকে দেখছি। কেউ আমাদের সহযোগিতা করে না। এভাবে ক্লাব চালানো যায় না। কয়েক জন মিলে ক্লাব চলে না। এলাকার কেউ আসে না। বসুন্ধরা কিংসের সহযোগিতা ছিল বলেই আমরা প্রিমিয়ার লিগে খেলতে পারছি। তারা আমাদেরকে অর্থ দিয়েছে, খেলোয়াড় দিয়েছে।’ মহি বলেন, ‘এলাকার সাবেক ফুটবলার বাইরে বসে বড় বড় কথা বলেন। কিন্তু সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন না। অনুরোধ করলেও আসেন না। বাইরে বসে মায়াকান্না করেন।’

ইত্তেফাক/জেডএইচ