শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

খাদ্যে মূল্যস্ফীতি এখন ১৫ শতাংশ: বিআইডিএস

আপডেট : ১০ মে ২০২৪, ০১:৪৪

বর্তমানে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) একটি জরিপের তথ্য উল্লেখ করে মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেছেন, বাড়তি এ মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ অসুবিধায় রয়েছে। সম্প্রতি বিআইডিএসের পক্ষ থেকে দেশের সব জেলা থেকে তথ্য নিয়েছি। এরপর একটি পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতি হিসাব করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১৫ শতাংশ। অবশ্য সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রতি মাসে যে হিসাব দেয়, তাতে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার ৯.৮৭ শতাংশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএসে ‘বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বিআইডিএসের মহাপরিচালক জানান, জরিপে দেখা গেছে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে মাছের দাম। গত এক বছরে মাছের দাম ২০ শতাংশের ওপর বেড়েছে। এরপর রয়েছে পোলট্রি মুরগির দাম। দেশের পোলট্রি খাদ্যের বড় অংশই আমদানিনির্ভর। গত দুই বছরে আমদানি করা এসব খাবারের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে, যা শেষ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা উপস্থিত ছিলেন। বইটি লিখেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এম এ মান্নান।

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী অর্থনীতিবিদদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সব সময় নরম ভাষায় কথা বলেন, এটা ভালো। কিন্তু যারা ঋণখেলাপি হচ্ছে, দিনদুপুরে ব্যাংক থেকে অর্থ সরিয়ে নিচ্ছে, তাদের কেন সরাসরি ডাকাত বলেন না। ডাকাতদের তো ডাকাতই বলতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিনায়ক সেন বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন আনতে বহুদিন ধরে ব্যাংকিং কমিশন করার কথা বলা হচ্ছে। এখানে কেউ হাত দিচ্ছি না। ব্যাংকিং কমিশন না করলে অন্তত ব্যাংকিং কমিটি গঠন করা হোক। এ বিষয়ে এম এ মান্নান বলেন, আমাদের অবস্থা হয়েছে, চুন খেয়ে গাল পোড়ে, দই দেখে ভয় করে। জীবনে অনেক কমিশন দেখেছি। কমিশন নয়, সরাসরি সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. সাদিক আহমেদ বলেন, খেলাপি ঋণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলো। এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং এতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছিল। তাই খেলাপি ঋণের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কোনো সমাধানই কাজে আসবে না।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে রপ্তানি প্রণোদনার বিষয়ে ড. মসিউর রহমান বলেন, রপ্তানি প্রণোদনা বন্ধ করা হবে কি না, সেটা সরকার ভেবে দেখতে পারে। যদি এ প্রণোদনা বহাল রাখা হয়, সে ক্ষেত্রে রপ্তানি খাতে ঐ পণ্যের অবদান যাচাইয়ের ভিত্তিতে তা দেওয়া যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ সময় মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক না করায় এক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যতা তৈরি হয়েছে। এখন এটিকে বাজারভিত্তিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, এখন থেকে বাজারের সঙ্গে মিল রেখে নিয়মিতভাবে মুদ্রার বিনিময়হার সমন্বয় হওয়া প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গবেষণা ও নীতিসহায়ক সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ও বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে মুজেরি, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) চেয়ারম্যান ও পিআরআইয়ের পরিচালক ড. বজলুল হক খন্দকার, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান এবং বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন।

ইত্তেফাক/এএইচপি