ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে বুধবার (৮ মে)। ভোট গণনা শেষে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তাগণ। কিন্তু নির্বাচনে বিএনপির অনেকে জয়ী হলেও পরাজিতরা আছেন চিন্তার ভিতরে। বিএনপির ভোট বর্জন, বহিষ্কারাদেশ পরও কিছু নেতা সেসব অমান্য করেই শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে লড়াই করে গেছেন। এরমধ্যে নির্বাচনে বেশিরভাগই হেরেছেন। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসব পরাজিত প্রার্থীরা হারাতে পারেন দলীয় পদ-পদবীও।
দলের বহিষ্কারাদেশ মাথায় নিয়ে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করেন বিএনপি নেতা মো. নাজমুল আলম। ভোটে লড়াই করায় জেলা বিএনপির এ সাংগঠনিক সম্পাদককে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ভোটে আওয়ামী লীগ নেতার কাছে বড় ব্যবধানে হেরে গেছেন। তার পরাজয়ের পেছনে বিএনপির স্থানীয় নেতাদের নেতিবাচক আচরণকে দায়ী করছেন নাজমুল আলম। একে তো দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে পদ হারালেন; এখন নির্বাচনেও হেরে গেলেন। অর্থাৎ দুই কূলই হারালেন তিনি। এ পরিস্থিতিতে তিনি বলছেন, রাজনীতি করবেন সময় নিয়ে।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত এ নেতার মতো দলের বেশিরভাগ প্রার্থীর একই অবস্থা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে দলটির ৩০ জনের বেশি নেতা অংশ নেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোট করায় দল সবাইকে বহিষ্কার করে। তবে ভোটের লড়াইয়ে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত বেশ কয়েকজন নেতা। এদিকে ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ নেতাদের জয়জয়কার। এ পরিস্থিতির মধ্যেও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অন্তত ৭ জন নেতা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় বিএনপি নেতা মো. নাজমুল আলম পেয়েছেন মাত্র ২২ হাজারের মতো ভোট। যেখানে আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আওলাদ হোসেন মোটরসাইকেল প্রতীকে ৪৫ হাজার ৪১ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ খান কাপ-পিরিচ প্রতীকে পেয়েছেন ৪২ হাজার ৮৪৬ ভোট। নাজমুল জেলা কমিটির পাশাপাশি সদর উপজেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়কের পদেও ছিলেন।
সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা ঢাকার পাশের জেলা মানিকগঞ্জে। হরিরামপুর ও সিঙ্গাইর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের চার নেতা অংশ নেন। দলীয় নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের চারজনকেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর নির্বাচনেও তারা পরাজিত হন।
হরিরামপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. জাহিদুর রহমান তুষার ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা বিএনপির সদস্য মোশারফ হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
এ ছাড়া সিঙ্গাইর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা রহমান লিপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন।
এ বিষয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিএনপির বহিষ্কৃত নেতারা সরকারের পাতানো ফাঁদে পা দিয়েছেন। নির্বাচনে তাদের সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীরা ছিল না। এ থেকে শিক্ষা নিয়ে পরের ধাপগুলোর উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন; আশা করি তারা প্রত্যাহার করবেন।’
বিএনপির সাত বিজয়ী
চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দুটিতেই বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতারা। গোমস্তাপুরে আশরাফ হোসেন আলিম ও ভোলাহাটে চেয়ারম্যান হয়েছেন আনোয়ার হোসেন। আশরাফ হোসেন গোমস্তাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য।
বান্দরবান সদর উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আবদুল কুদ্দুছ। শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির আরেক বহিষ্কৃত নেতা আমিনুল ইসলাম বাদশা। তিনি ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য। গাজীপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান ইজাদুর রহমান মিলন। তিনি উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রীনা পারভীনকে পরাজিত করেছেন। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি যুক্তরাজ্য প্রবাসী মোহাম্মদ সুহেল আহমদ চৌধুরী বিজয়ী হয়েছেন। এই বিজয়ীরা বলছেন, দলের হাইকমান্ডের কাছে তারা বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিতে আবেদন করবেন।