সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি অবস্থা থেকে ফিরে আসার পর বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ক্যাপ্টেন তৌফিকুল ইসলামের বাড়িতে আনন্দের বন্যা বইছে।
বুধবার (১৪ মে) সকাল ৯টায় খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা করিমনগরের বাসায় পৌঁছান ক্যাপ্টেন তৌফিকুল ইসলাম। এ সময় তিনি বৃদ্ধা মা দিল আফরোজ, বাবা মো. ইকবাল হোসেন এবং তার দুই শিশু সন্তান তাসফিয়া তাহসিনা (৭) ও আহমেদ রুসফিকে আবেগে বুকে জড়িয়ে ধরেন। বাবা, মা আর স্ত্রী-সন্তানকে কাছে পেয়ে দীর্ঘ এক অপেক্ষার অবসান ঘটে।
দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় পর জলদুস্যুদের হাত থেকে ফিরে আসার পর ছেলে তৌফিকুলকে দেখে অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন বৃদ্ধা মা দিল আফরোজ। আনন্দে তিনি কথা যেন কথা বলতেই ভুলে গিয়েছিলেন।
কিছু সময় পর দিল আফরোজ কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বলেন, জিম্মি অবস্থা থেকে ছেলে ফিরে আসার খবর ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না-সে অন্য রকম অনুভূতি। দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় ছেলেসহ নাবিকরা জিম্মি থাকায় অন্য রকম চিন্তা ছিল, কী হয়, না হয়। সে-টা এখন বলা যাবে না কী পরিস্থিতিতে ছিলাম। এখন ছেলে ফিরে এসেছে-তার জন্য আল্লাহর নিকট হাজারো শুকরিয়া জানাই। সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে জাহাজের দ্বিতীয় প্রকৌশলী মো. তৌফিকুল ইসলাম খুলনার করিম নগরের বাসায় ফিরে আসার পর তার মা দিল আফরোজ অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তার অনুভূতি এভাবে ব্যক্ত করেন।
কথায় কথায় তিনি বলেন, ২৩ নাবিক যে ফিরে এসেছে, বা-মার কাছে, স্ত্রী-সন্তানের কাছে- এটাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার ও অফিসের লোকজন ( শিপিং কোম্পানি) অনেক চেষ্টা করেছে। তাদের প্রতিও অসীম কৃতজ্ঞতা আমাদের। ছেলেরা আমাদের কাছে ফিরে এসেছে- এটাই এখন আমাদের কাছে সবচেয়ে আনন্দের।
কাপ্টেন তৌফিকের পিতা মো. ইকবাল হোসেন ছেলে ফিরে আসার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ছেলের মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আসাটা ঈদের আনন্দ থেকেও অনেক খুশির। যে-দিন জিম্মি দশায় তারা আটক হলো, সে দিন থেকে মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত রাস্তাঘাটে, সব জায়গায় অকাতরে চোখের পানি ফেলেছি। সব সময় দোয়া করেছি। শুধু আমার ছেলের জন্য নয়। জিম্মি সব নাবিকের জন্যই দোয়া করেছি। সব নাবিকই আমাদের দেশের সম্পদ। যে দিন শুনলাম তারা মুক্তি পেয়েছে-সে দিন থেকেই আমাদের সব পেরেশানি দূর হয়ে গেছে। তখন আশা করেছি, কীভাবে তারা সুস্থভাবে দেশে ফেরে। তবে আল্লাহ’র রহমত কালকে (মঙ্গলবার) যখন চিটাগাং বন্দরের অবস্থা দেখলাম, তখন খুব খুশি লাগল। আজকে (বুধবার) খুশিটা আরো অনেক বেশি। সকল নাবিককে সুস্থভাবে ফেরত আনার জন্য সরকার, কোম্পানিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমাদের অশেষ ধন্যবাদ।
ক্যাপ্টেন তৌফিকুল ইসলাম বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে বাসা পর্যন্ত আসতে পেরে সরকার, তার কোম্পানি ও স্বজনদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, দীর্ঘ দুই মাস পর বাড়িতে ফিরে আসলাম। বাড়িতে ফিরে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে এখন মাথা থেকে চাপ অনেকটাই দূর হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আব্দুল্লাহ। জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিককের সবাইকে জিম্মি করে। দস্যুরা জাহাজটি অস্ত্রের মুখে সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যায়। দীর্ঘ ৩৩ দিন পর গত ১৪ এপ্রিল সোমালি দস্যুরা জাহাজসহ ২৩ নাবিককে মুক্তি দেয়। এরপর জাহাজটি দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা দিয়ে ২১ এপ্রিল ঐ বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছায়। গত ১১ মে দেশের জলসীমায় পৌঁছে জাহাজটি।