নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে প্রার্থীর ভোট বর্জন, সোনারগাঁ জাল ভোট ও এজেন্টকে মারধরের অভিযোগে ২ জনের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া রূপগঞ্জে জাল ভোট দিতে এসে আরও দুই যুবক আটক ও সোনারগাঁয়ে যুবরীগ নেতারা ভোট দিয়ে ফেসবুকে ভাইরাল করার ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (২১ মে) দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে সকাল ৮টা থেকে আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ে ৪২৩টি ভোটকেন্দ্রে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে।
আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ শাহজালাল বিভিন্ন অভিযোগ এনে দুপুরে ভোট বর্জন করেছেন। তিনি বলেন, আমি এ নির্বাচন মেনে নিতে পারছি না। আমি চাই এখানে পুনরায় ভালো একটি নির্বাচন হোক। আমি নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের লোকজনের কাছে প্রমাণাদির ভিত্তিতে নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। আমি এ নির্বাচন বর্জন করলাম। তিনি বিকালে আড়াইহাজারের নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের কথা জানান।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমার সারাদিনের অভিজ্ঞতায় ও যতটুকু প্রমাণ আমি পেয়েছি প্রমাণাদি নিয়ে সেগুলো তুলে ধরছি। আড়াইহাজার উপজেলায় আমি ১৩৯টি কেন্দ্রে আমার এজেন্ট দিয়েছি। গত রাত থেকে আমার এজেন্টদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে তারা যেন উপস্থিত না হয়। এজেন্টদের না পেয়ে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। কালাপাহাড়িয়া এলাকায় আমার এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমার এজেন্টদের মারধর করে বিদায় করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে সকাল থেকে এজেন্টদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কিছু কেন্দ্রে আমার এজেন্ট ছিল, সেসব জায়গায় ভোটের পার্সেন্টেজ খুবই কম। আপনারা দেখেছেন ভোট পড়ছে ৩/৪ শতাংশ। আমার এজেন্টরা অনেক কেন্দ্রে ছিল। তাদের বের করে দিয়ে ১২টার পর থেকে তারা প্রতিটি কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে।
প্রশাসনের কাছে আমি অভিযোগ করেছি, তারা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দেখেছে। একটি কেন্দ্রে একজনকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের ছোট ভাই। কেন্দ্রগুলোতে তারা প্রভাব খাটিয়ে আমার এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন। আড়াইহাজারের আজকের নির্বাচন আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেমন চাচ্ছেন তেমনটি হয়নি। মানুষ ভোট দিতে যায়নি। ২-৩ শতাংশ বেশি ভোট পড়েনি। যেখানে সিল মেরেছে সেগুলোর ব্যাপারে এখনও আমি জানি না।
আড়াইহাজারের শৃভুপুরা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এক প্রার্থীর এজেন্টকে মারধর করায় এক যুবককে ২ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। সেইসঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সাজাপ্রাপ্ত যুবকের নাম জাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া (৪৫)। লক্ষীবরদী এলাকার মৃত ছমিরউদ্দীন ভূঁইয়ার ছেলে সে। এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাকিব আল রাব্বি।
জানা গেছে, খাগকান্দা ইউনিয়নের ওই কেন্দ্রে চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ শাহাজালাল মিয়ার দোয়াত কলম প্রতীকের এজেন্টকে মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম ভূঁইয়ার ভাই জাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া। জাহিদুল ইসলাম অপর প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন এর ঘোড়া প্রতীকের সমর্থক বলে জানা গেছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শামছুর রহমান এ সাজা প্রদান করেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাকিব আল রাব্বি জানান, সকালের দিকে এ ঘটনা ঘটে। ওই যুবককে ২ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত যুবক কোনো পোলিং এজেন্ট ছিলেন না।
এদিকে রূপগঞ্জে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাল ভোট দেয়ার সময় দুজন যুবককে আটক করা হয়েছে। দুপুরে উপজেলার মাঝিনা মৌজার আহমদিয়া ফাযিল ডিগ্রি মাদ্রাসার কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটেছে।
আটক দুজন হলেন মাঝিনা এলাকার আলী হোসেনের ছেলে ইমরান হোসেন ও আব্দুল জলিলের ছেলে মফিজুল ইসলাম।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ভোট কেন্দ্রে কয়েকজন যুবক লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। তবে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে কয়েকজন যুবক দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় দুজন যুবক কে ভোট দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে, তারা সাংবাদিকদের সেঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। পরে তাদের আটক করা হয়। ওই দুই যুবক ইতোপূর্বে ভোট দিয়ে ফের ভোটদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার কথা স্বীকার করেছে। এ সময় পুলিশ তাদের আটক করেছে।
কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আনিসুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে কন্ট্রোল রুমে ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তারা এসে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
অপরদিকে সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাল ভোট দিয়ে ধরা পড়ার পর এক যুবককে ৬ মাসের কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। দুপুরে উপজেলার বারদি ইউনিয়নের দলরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। দণ্ডপ্রাপ্ত হলেন আবু হানিফ (১৯) দলরদী গ্রামের কবিরের ছেলে।
জানা যায়, জাল দিতে আসা যুবকের নাম আবু হানিফ, সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালামের সমর্থক। সে ঘোড়া প্রতীকে জাল ভোট দিতে গিয়ে ধরা পরে। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
এ ছাড়া ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদত সোহাগ রনি তার ভোট দিয়ে ব্যালট পেপারের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে নির্বচনকে বির্তকিত করেছে। এ ঘটনায় এখনো প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।