জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) পরিচয় দিয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মো. হারুন অর রশিদ (৪৭) নামে এক প্রতারককে আটক করা হয়েছে। ভুক্তভোগী তরুণ-তরুণীরা কৌশলে হারুন অর রশিদকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। প্রতারক হারুন অর রশিদের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের চুয়াত্তর (চরগুগি) গ্রামে।
গত মঙ্গলবার মির্জাপুর উপজেলার পার্শ্ববর্তী দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি গ্রামের এক বন্ধুর বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। প্রতারণার শিকার তরুণ-তরুণীরা তাদের টাকা ফেরত ও প্রতারক হারুন অর রশিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে টাঙ্গাইল জেলা জজ আদালত এবং মির্জাপুর থানায় কয়েকটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছেন মির্জাপুর থানার ডিউটি অফিসার মো. হাবিবুর রহমান।
গতকাল বুধবার পুলিশ ও এনএসআইয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হারুন অর রশিদ নামে কোনো সহকারী পরিচালক (এডি) এনএসআইয়ের কোনো অফিসে কর্মরত নেই। তিনি ভুয়া নাম ব্যবহার করে প্রতারণা করেছেন এবং জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন। তিনি কখনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, কখনো শিক্ষা অধিদপ্তর, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, সচিবালয়সহ বিভিন্ন অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের নাম ব্যবহার করতেন।
পুলিশের হাতে আটকের পর মো. হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন, সাত-আট বছর আগে মির্জাপুর উপজেলার সাবেক এক অতিরিক্ত সচিব ও তার আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে এনএসআইয়ে চাকরির জন্য আবেদন করেন। আবেদনের পর এনএসআইয়ে তার চাকরি না হলেও ভুয়া নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন হারুন। এরপর থেকেই তিনি এনএসআইসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাকরি দেওয়ার নামে এলাকার তরুণ-তরুণীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলেন। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে একটি চক্রের মাধ্যমে অন্তত কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মির্জাপুর ও দেলদুয়ার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে তরুণ-তরুণীদের চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৩ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেন হারুন। এভাবে অন্ততপক্ষে ২৫-৩০ জনের কাছ থেকে তিনি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করেন। এভাবে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও প্রতারক হারুন কাউকে চাকরি দেননি এবং টাকাও ফেরত দেননি।
গত সোমবার চাকরি দেওয়ার নামে আবার কয়েক জন তরুণ-তরুণীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার জন্য হারুন অর রশিদ তার বন্ধুর বাড়ি লাউহাটি গ্রামে যান। এলাকার লোকজন হারুনের প্রতারণার শিকার কয়েক জন তরুণ-তরুণীকে খবর দিলে তারা ঐ বাড়িতে হাজির হয়ে প্রতারক হারুনকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পার্শ্ববর্তী মির্জাপুর উপজেলার দেওড়া গ্রামে নিয়ে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন হারুনের পরিবারকে খবর দিলেও তারা তাকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসেননি। পরে স্থানীয়রা জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হারুনকে উদ্ধার করে মির্জাপুর থানায় নিয়ে আসে। এ ব্যাপারে গতকাল মঙ্গলবার রাতে ভুক্তভোগী লুবনা আক্তার বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এর আগে প্রতারণার শিকার আরো দুই তরুণ হারুনকে আসামি করে টাঙ্গাইল জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মির্জাপুর থানার ওসি মো. রেজাউল করিম বলেন, হারুনকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে তাকে টাঙ্গাইল কোর্টে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ডে এনে তদন্তসাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।