লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় ৩৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক পুনরায় চালু করে। কিন্তু অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকা, স্বাস্থ্যকর্মী ও ক্লিনিকে সিএইচসিপিদের সময়মতো না আসা, দিনের পর দিন অনুপস্থিতি, অপর্যাপ্ত ওষুধ ও সেবা না পাওয়ায় রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জানা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৩৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকে জনগণকে স্বাস্ব্যসেবায় সম্পৃক্ত রাখতে সরকার ক্লিনিকে একজন কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী (হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার), একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও একজন পরিবারকল্যাণ সহকারী নিয়োগ দেয়। সকাল ৯টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত তাদের ক্লিনিকে বসে রোগীদের সেবা দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও খোলা থাকে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা। তবে, সেটিও প্রতিদিন নয়।
অন্যদিকে, স্বাস্থ্য সহকারী একজনকে সপ্তাহে তিন দিন প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু তারা তা করেন না। এছাড়া পরিবার পরিকল্পনা সহকারী একজন নারীকে সপ্তাহে তিন দিন দায়িত্ব পালন করতে হয়। একজন মেডিক্যাল অ্যাসিসটেন্টকে মাঝে মধ্যে রোগী দেখতে যেতে হয়। এ জন্য সরকার প্রতি মাসে ক্লিনিকে লাখ লাখ টাকা ওষুধও বরাদ্দ দেয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিক দিনের বেশিরভাগ সময়ই থাকে তালাবদ্ধ। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে ফিরে যেতে হয় রোগীদের। কখনো খোলা পাওয়া গেলেও মেলে না ওষুধ। একই অবস্থা চরমোহনা কমিউনিটি ক্লিনিক, দক্ষিণ কেরোয়া কমিউনিটি ক্লিনিক, চরপাতা কমিউনিটি ক্লিনিকসহ প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকের।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, ক্লিনিকগুলোতে প্রাথমিকভাবে ব্লাড পেশার মেশিন (বিপি), গর্ভবতী নারীদের রক্তচাপ মাপার যন্ত্র, প্যাথলজির প্রাথমিক কাজকর্ম করার মতো যন্ত্রপাতি, ওষুধের পরিমাণ ও প্রকারভেদ বাড়ানো এবং সার্বক্ষণিক একজন মেডিক্যাল অ্যাসিসটেন্ট অথবা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য সহকারী, সপ্তাহে কমপক্ষে দুইদিন রোগী দেখার কাজে নিয়োজিত রাখা খুবই জরুরি।
জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিটি কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত তিন জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা-স্বাস্থ্যকর্মী দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, এসব ক্লিনিকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না অনেকে। ফলে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ উপজেলার সেবাপ্রত্যাশী সাধারণ মানুষ।
চরকাছিয়া গ্রামের শেফালী আক্তার ও সোনার গ্রামের আমেনা জানান, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তারা ক্লিনিকে যান। ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কাউকে না পেয়ে চলে আসেন। দক্ষিণ চরবংশী গ্রামের জাহিদ আলম জানান, তাদের এলাকার ক্লিনিকগুলো প্রায়ই বন্ধ থাকে। মাঝে মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীরা দুপুরে এসে আধা ঘণ্টা থেকে চলে যান। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বাহারুল আলম বলেন, ‘মাঝে মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে পরিদর্শনে গেলে অনুপস্থিতি পাওয়া যায়। তখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়।’ তিনি জানান, ক্লিনিকগুলোকে গণমুখী করতে সরকারের পলিসি লেবেলে কাজ চলছে। গুণগত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’