ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে টানা বর্ষণে বরিশাল জেলার ১০টি উপজেলার ১৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আড়াই কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে কোনো বিদ্যালয়ই শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ নেই। জেলা শিক্ষা অফিস বলছে, মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই খুব দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, গত ২৬ মে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বরিশাল জেলার ১০টি উপজেলার ১ হাজার ৫৯০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৭০টি বিদ্যালয়ে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আর্থিকভাবে আনুমানিক ২ কোটি ৬১ লাখ ৬১ হাজার ৫৪৮ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এসব বিদ্যালয়ে গাছ পড়ে টিনশেড ভবনের টিন নষ্ট, ভবনের ছাদ, দরজা-জানালা ও শৌচাগার ভেঙে গেছে। আবার অতিরিক্ত পানি বাড়ায় অনেক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষের ফ্লোর নষ্ট হয়েছে। জেলার ১০টি উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে—বরিশাল সদরে ৫টি, বাবুগঞ্জে ১১টি, আগৈলঝাড়ায় ৫টি, উজিরপুরে ১২টি, গৌরনদীতে ১৯টি, বাকেরগঞ্জে ৩৪টি, বানারীপাড়ায় ৮টি, মুলাদীতে ৩১টি, মেহেন্দীগঞ্জে ৪১টি এবং হিজলায় ৪টি বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বরিশাল নগরী ও সদর উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি দেওয়াল হেলে পড়েছে। আবার কোনো কোনো বিদ্যালয়ের টিনের ওপর গাছ পড়ে টিনশেড ভেঙে গেছে। এছাড়া পানি পানের জন্য যেসব নলকূপ ছিল, সেগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় সেসবের পানি পান করার মতো অবস্থা নেই। এসব পানি যদি শিক্ষার্থীরা পান করে, তাহলে ভুগতে পারে পানিবাহিত রোগসহ নানা রোগে।
নগরীর সিস্টারস্ ডে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজা খানম জানান, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করা হয়। ঘূর্ণিঝড়ের সময় সেফটিক ট্যাংক পানিতে ভরে গেছে, দরজা-জানালা নষ্ট হয়েছে। এছাড়া সীমানা দেওয়াল হেলে পড়েছে। এখনো সংস্কার হয়নি; তবে বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। এত সমস্যার মধ্যেও শিক্ষা কর্যক্রম বন্ধ করেনি বলে জানিয়েছেন এই প্রধান শিক্ষক। শুধু নগরীতেই নয়, এমন স্কুল রয়েছে জেলার বিভিন্ন উপজেলায়।
বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মো. আক্তারুজ্জামান জানান, জেলার ১৭০টি বিদ্যালয় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুত সংস্কারের জন্য ক্ষতির বিবরণসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে স্থাপনার ক্ষতি হলেও পাঠদান কোনোভাবেই ব্যাহত হয়নি। আর্থিক ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সুষ্ঠু সমাধানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।