পাসপোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দেওয়া জন্মনিবন্ধন। দুই সংস্থার আলাদা আলাদা সার্ভার জটিলতার কারণে এ সমস্যা কোনোভাবেই সমাধান হচ্ছে না। চাকরিতে যোগদান, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নাগরিক সেবার ১৯টি ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়। গত কয়েক মাস ধরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) থেকে এ গুরুত্বপূর্ণ সনদ হাতে পেয়েও কেউ কাজে লাগাতে পারছেন না। এটি শুধু শিশুর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে। সম্ভব হচ্ছে না পাসপোর্ট করানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজও।
গত বছর প্রায় তিন মাস (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় জন্ম নেওয়া শিশুদের জন্মসনদ প্রদান কার্যক্রম। পরে গত অক্টোবর মাসে নিজস্ব সার্ভার চালু করে জন্মনিবন্ধন সেবা দিতে শুরু করে ডিএসসিসি। ঐ মাসেই জন্মনিবন্ধন করানো হয় প্রায় ৭ হাজার, নভেম্বর মাসে ১৫ হাজারের বেশি জন্মনিবন্ধন দেয়, পরে ডিসেম্বর মাসে প্রায় ২০ হাজার জনের জন্মসনদ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এর পর থেকে প্রতি মাসে বিপুলসংখ্যক জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। নিজস্ব সার্ভারের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন সনদ দিলেও সেই জন্মসনদ দিয়ে শুধু স্কুলে ভর্তি করানো যাচ্ছে শিশুদের। বাকি কোনো কাজ করা যাচ্ছে না। ডিএসসিসির নিজস্ব সার্ভারের সঙ্গে অন্যান্য সেবাকেন্দ্রিক সার্ভারের সংযোগ না থাকায় এ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে মানুষকে।
এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে প্রায় ২৬টি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন যাতে পাসপোর্ট বা এ জাতীয় সেবা পেতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয়। কিন্তু সেই সার্ভারগুলো এখনো ডিএসসিসির নিজস্ব সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত হয়নি। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে স্কুলে ভর্তি, জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি, পাসপোর্ট তৈরিসহ মোট ১৮টি সেবা পেতে জাতীয় জন্মসনদ প্রয়োজন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সরকারি-বেসরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার তালিকা, জমি রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, আমদানি-রপ্তানি, লাইসেন্স ইস্যু, গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ, টেলিফোন সংযোগ গ্রহণ, বাড়ির নকশার অনুমোদন, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুসহ নানান কাজে ব্যবহৃত হয় জন্মসনদ। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার এক বাসিন্দা
মিজানুর রহমান। তার দুই বছরের ছেলে রিহান আহমেদের জন্মনিবন্ধন করা হয়েছে বেশ কিছুদিন আগেই। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল ২-এর বাসিন্দা হওয়ার কারণে সেই আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে খুব সহজেই জন্মসনদ নিতে পেরেছেন। কিন্তু সমস্যা বাধে অন্য জায়গায়। এ জন্মসনদ দিয়ে পাসপোর্ট করাতে গিয়েই তাকে পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনায়। কারণ পাসপোর্টের সার্ভারের সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্মসনদ দেওয়ার
সার্ভার সংযুক্ত নয়। সে কারণে পাসপোর্ট অফিস থেকে বারবার চেষ্টা করার পরেও তার জন্মনিবন্ধনটি সঠিক দেখাচ্ছিল না। শুধু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে করানো জন্মসনদ দিয়ে পাসপোর্ট করানোর ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি হচ্ছে। কারণ তারা পাসপোর্টের মতো সরকারি অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তাদের সার্ভারের কানেক্টিভিটি করাতে পারেনি।
এ সমস্যা নিয়ে ঢাকার একটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুধু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে করানো জন্মসনদ দিয়ে পাসপোর্ট করানোর ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি হচ্ছে। কারণ তারা পাসপোর্টের মতো সরকারি অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তাদের সার্ভারের কানেক্টিভিটি করাতে পারেনি। এটা সমাধান হতে আরো সময় লাগবে। যতদিন পর্যন্ত এর সমাধান না হবে ততদিন পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিজস্ব সার্ভারের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে পাসপোর্ট করানো সম্ভব হবে না।
সার্বিক বিষয় নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মুখপাত্র আবু নাসের বলেন, 'সমস্যা হচ্ছে সেটা আমরাও ইতিমধ্যে জেনেছি। এ বিষয়টির সমাধানের লক্ষ্যে আমাদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর, প্রতিষ্ঠানকে আমরা চিঠি পাঠিয়েছি। সার্ভারের মাধ্যমে অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যে কানেকশন এটি ঠিক করার লক্ষ্যেই আমরা এসব প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করা যাচ্ছে খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এই বিষয়ে সমাধান পাওয়া যাবে।'