পুরান ঢাকার চকবাজারে অবস্থিত মোগল আমলের পুরাকীর্তি বড় কাটরা। এ স্থাপনার দেওয়ালে এখনো দেখা যায় প্রায় ৪০০ বছর আগের নকশার কাজ। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, পুরান ঢাকার ২ হাজার ২০০ স্থাপনার দেওয়াল ভাঙা, সংস্কার, মেরামত করা যাবে না। কিন্তু কোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বড় কাটরার একটি অংশ ভেঙে ফেলেছে দুষ্টচক্র। সিলগালা থাকা সত্ত্বেও আগস্টের শেষ সপ্তাহে বড় কাটরার ভেতরে একটি বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় অভিযোগ জানিয়ে রাজধানীর চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।
রাজউক বলছে, এটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। এটি চাইলেই কেউ ভাঙতে পারে না। এ বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান নগর-পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবন হলেও যেহেতু এটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞা ছিল, ফলে মালিকপক্ষ এটি ভাঙতে পারে না। স্পষ্টই তিনি এটি অপরাধ করেছেন। এ বিষয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানা যায়, সুবেদার শাহ সুজার আমলে বানানো বড় কাটরা ও সুবেদার শায়েস্তা খানের বানানো ছোট কাটরাকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৮৯ সালে ‘সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ’ হিসেবে ঘোষণা করে। রাজউক এই দুই স্থাপনাকে ‘ঐতিহ্যবাহী বিশেষ ভবন বা স্থাপনা’ হিসেবে ঘোষণা এবং সংরক্ষণের জন্য তালিকাভুক্ত করে ২০২০ সালে। এর আগে ১৯০৯ সালে ব্রিটিশ সরকার প্রথম এই স্থাপনাটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করেছিল। আরবান স্টাডি গ্রুপ ২ হাজার ২০০টি বাড়িকে প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ উল্লেখ করে উচ্চ আদালতে রিট করেছিল। এসব বাড়ি অক্ষত রেখে সেগুলোর প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য নির্ণয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে ২০১৮ সালে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। মাঠপর্যায়ে জরিপ করে সেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল ও নিষ্পত্তির আগে সেই ২ হাজার ২০০ স্থাপনায় কোনো রকম পরিবর্তন করা যাবে না বলে হাইকোর্ট আদেশ দেয়। এই তালিকার মধ্যে আছে বড় কাটরা এবং ভেঙে ফেলা ঐ বাড়িটিও।
আইনে বলা আছে, সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদের কাঠামোর পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন, বিয়োজন করা যাবে না। ভবনসংলগ্ন বা পাশে এবং চত্বরে নির্মাণ করা যাবে না নতুন কোনো স্থায়ী কাঠামো। কিন্তু দখলদারেরা এসব কিছুই না মেনে আদি কাঠামোর ওপর শুধু পরিবর্তন বা পরিবর্ধনই করছে না, নতুন নতুন কাঠামো নির্মাণ করে ঢেকে দিচ্ছে ভবনের মূল কাঠামো। বড় কাটরার ভেতরের চত্বরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে কিছুটা অংশ ছাড়া ভবন দুটির ভেতরের চত্বরও ঢাকা পড়ে গেছে নতুন নতুন ভবনে।
জানা যায়, ব্যক্তিমালিকানাধীন বাড়িটি ছিল বড় কাটরার দেওয়ালের সঙ্গে। ঐ দেওয়ালে আনুমানিক প্রায় ৩ শতাংশ জায়গা এবার নিশ্চিহ্ন করে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেওয়ালের এ অংশে ছিল মোগল আমলে বানানো তিনটি ঘর।
এ বিষয়ে জানতে বাড়ির মালিক মো. আলী হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ছেলে মো. অনিক বলেন, এবার নতুন করে কিছু ভাঙা হয়নি। ২০২২ সালেই যা ভাঙার, ভাঙা হয়েছে। আর এখানে তাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবন ছিল; সেটাই ভাঙা হয়েছে। সে ভবনটি মোগল আমলের নয়।
পুরান ঢাকার পুরাকীর্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা আরবান স্টাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী স্থপতি তাইমুর ইসলাম বলেন, বড় কাটরা ধ্বংসযজ্ঞ সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের একটি অশনিসংকেত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে এসব তালিকা করে সংরক্ষণ করা হয়।