বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

এজিএম-নির্বাচন ছাড়াই বিহায় মনগড়া কমিটি: বেশিরভাগ সদস্য জানে না

আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:২৮

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিহা) নতুন কার্য কমিটি গঠনে টি.ও রুলস অনুসরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও নির্বাচন ছাড়াই গঠন করা হয়েছে কমিটি। এতে করে সংগঠনটিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে, যার নেতিবাচক  প্রভাব পর্যটন শিল্পের ওপর পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

বর্তমান এ সংগঠনটির সদস্য হিসাবে রয়েছেন থ্রিস্টার, ফোর স্টার ও ফাইভ স্টার মানের হোটেলের প্রায় অর্ধ শতকের বেশি উদ্যোক্তা। বিহা’র সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ হোটেলের সত্বাধিকারি এইচএম হাকিম আলী। তিনি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও। কিন্তু হঠাৎ করেই নির্বাচিত সভাপতির কাছ থেকে একটি সাদা কাগজে সই নিয়ে গত মধ্য আগস্টে বিহা'র ২০২৪-২০২৬ নতুন কার্যনির্বাহী কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়। এতে (গোল্ডেন টিউলিপ) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক খালেদ উর রহমান সানিকে সভাপতি হিসাবে নাম ঘোষণা করা হয়। 

তথ্য মতে, গোল্ডেন টিউলিপ হোটেলটি একটি ভাড়া বিল্ডিংএ পরিচালিত হচ্ছে, যার তিন তারকা লাইসেন্সও নেই, এটি বাণিজ্যিক ভবনও নয় । যেটির মালিক নর্দ্দা  যুবলীগের প্রেসিডেন্ট আবুল বাসার। যদিও বিহা ইন্টারন্যাশনাল মর্যাদার হোটেল মালিকদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। 

এ ছাড়া সংগঠনটিতে বিধিবহির্ভূত ভাবে দুজন ভাইস প্রেসিডেন্ট, ছয়জন কার্যনির্বাহী সদস্য এবং এইচএম হাকিম আলীকে সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে রাখে নতুন কমিটি। টি.ও রুলস মানা  হয়নি জানতে পেরে তাদের অবৈধ কমিটির একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট লং বীচ হোটেল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ তাৎক্ষণিক ভাবে পদত্যাগ করেন। মূলত নতুন কমিটি গঠন নিয়েই বিহা'য় দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। ইতোমধ্যে মনগড়া কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বিহার বেশিরভাগ সদস্য। তারা বলছেন, বিহায় অতীতে এভাবে কোন কমিটি গঠন হয়নি। সদস্যদের না জানিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

হোটেল দ্য কক্স টুডের সত্বাধিকারী মহিউদ্দিন খান খোকন, বিহার কো চেয়ারম্যান ও দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা হোটেলের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার শাখাওয়াত হোসেন, লেকসোর হোটেলের সত্বাধিকারী তারেক শামস ও লংবীচ হোটেল কক্সবাজারের সত্বাধিকারী আবুল কালাম আজাদ জানান, এভাবে কমিটি করার নজির বিহায় কখনো দেখা যায়নি। এটি একটি অবৈধ কমিটি। অভিযোগ রয়েছে, বিহা'র নতুন কার্যনিবাহী কমিটি গঠনের বিষয়টি বাণিজ্য সংগঠন আইন (টি.ও রুলস) অনুযায়ী হয়নি। বাণিজ্য সংগঠন আইন ১৯৯৪ তে বলা হয়েছে, সংগঠনের সভাপতি, সহ-সভাপতি এবং কার্যনির্বাহী কমিটির পরিচালকগণ প্রতি দ্বিতীয় বছরে, গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। 

এ ছাড়া টি.ও রুলস অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করা হবে এবং নির্বাচনের ফলাফল সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় ঘোষণা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু বিহা'য় বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ গঠনে কোন ধরনের ভোটের আয়োজন করা হয়নি। এমনকি বার্ষিক সাধারণ সভাও করেনি আগের নির্বাচিত কমিটি। 

এ প্রসঙ্গে নিজেকে নির্বাচিত সভাপতি দাবি করে এইচএম হাকিম আলী বলেন, আমি তো পদত্যাগ করেনি। এমনকি বার্ষিক সাধারণ সভাও আমরা ডাকেনি। অথচ তারা একটি কমিটি গঠন করেছে বলে দাবি করেছে। এটা বাণিজ্য সংগঠন আইন বা টি. ও রুলস অনুযায়ী হয়নি। 

তিনি বলেন, বিধিবহির্ভূতভাবে জোরপূর্বক যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ  অবৈধ।  তবে দ্রুত বিহা'য় নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। শান্তিপূর্ণ ভোটের মাধ্যমে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হবে বলে আশা করছি। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খালেদ উর রহমান সানি বলেন, মেয়াদ শেষ হওয়ায় আমরা সবাই বসে একটি কমিটি গঠন করেছি। বাণিজ্য সংগঠন আইন অনুযায়ী বর্তমান কমিটি হয়েছে কি না সে বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের আইনজীবীরা ভালো বলতে পারবেন। 

এদিকে এফবিসিসিআইয়ের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, ব্যবসায়ীদের যেকোন সংগঠনে কমিটি গঠন, বার্ষিক সাধারণ সভা এবং সদস্য নির্বাচন টি. ও রুলস অনযায়ী হতে হবে। আমরা এ বিষয়টির ওপর জোর দিচ্ছি। 

ইত্তেফাক/পিও