ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর। বর্তমানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি প্রতিষ্ঠান। যেখানে এডিস মশার কামড়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে, সেখানে বিশেষায়িত এই প্রতিষ্ঠানটির নেই কোনো নিজস্ব কার্যক্রম। প্রায় ২১১ জন কর্মকর্তা, কর্মচারী থাকলেও কিছু কর্মচারীকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন দায়িত্ব পালন করাচ্ছেন। বাকিদের বেতন-ভাতা নেওয়া ছাড়া যেন কোনো কাজ নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিজস্ব ভবন ও পর্যাপ্ত জনবল থাকলেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে দপ্তরটি কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
জানা যায়, লালবাগের নূর ফাতাহ লেনে এক একর ৩৯ শতাংশ জমির ওপর ১৯৪৮ সালে ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর প্রতিষ্ঠা করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। সে সময় ম্যালেরিয়া মোকাবিলায় পুরো ভূমিকাই রাখত এই দপ্তর। অনেক জনবল ছিল সে সময়। মশা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৭২ সালে দপ্তরটির ৩৩৮ জনবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেয় সরকার। ১৯৮৪ সালে এ বিভাগকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসা হয়। তখন ঢাকা সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিকে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, তাদের কাজ মশা নিধন করা। অথচ তাদের কোনো ক্ষমতাই নেই। সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী মশা মারার ওষুধ বিভিন্ন জোনে বিতরণ করাই এখন তাদের কাজ। কয়েক জন কর্মচারী জানান, তাদের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বেতন দেওয়া হয়। এতে তারা সন্তুষ্ট নন। কারণ মাঝেমধ্যেই তাদের বেতন-ভাতা পেতে দেরি হয়। সিটি করপোরেশন তাদের কার্যক্রম মনিটর করলেও জোরালো কোনো নজর নেই। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও এ দপ্তরের ব্যাপারে উদাসীন। অনেকটা অভিভাবকহীনই বলা যায় এ দপ্তরকে।
এই দপ্তরের সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জনবলের সংখ্যা ২১১ জন। পদ রয়েছে ৩৯৬টি। নিজস্ব কোনো কার্যক্রম না থাকায় কিছু জনবল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মশক সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেন। বাকিরা দপ্তরে বেতন ভাতা তৈরির কাজ করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু দপ্তরের নিজস্ব ভবন থেকে শুরু করে পর্যাপ্ত জনবল সবই আছে, সঠিক পরিকল্পনা এবং যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হলে মশক নিবারণী দপ্তরের কার্যক্রম সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, মশক নিবারণী দপ্তরকে একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ দপ্তরে রূপান্তর করার সুযোগ রয়েছে। এখানে মশার বংশবিস্তার নিয়ে গবেষণাগার, পরীক্ষাগার এবং মশা নিয়ন্ত্রণে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজিত হতে পারে।
দপ্তরটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী সচিব দীপ্তিময়ী জামান ইত্তেফাককে বলেন, মশক নিবারণী দপ্তরের এখন নিজস্ব কাজ নেই। তাই এখন দুই সিটির আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে এই দপ্তরের লোকজন মাঠে মশক সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করছেন। তবে সরকার মশক নিবারণী দপ্ততরকে সক্রিয় করার কথা ভাবছে। মশা প্রতিরোধে গবেষণা সেল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রকল্প নেওয়ার কথা ভাবছে সরকার।