‘আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ, এখনই’—প্রতিপাদ্য করে আজ দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। জাতিসংঘ ১৯৫০ সালে ১০ ডিসেম্বরকে ‘মানবাধিকার দিবস’ ঘোষণা করে। সেই থেকে প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক ‘মানবাধিকার দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জুলাই-আগস্ট বিপ্লব সংঘটিত হয়। তারপরও শেষ হয়ে যায়নি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নারী শিশু নির্যাতন, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘মব হত্যাকাণ্ড’।
ছেলেধরা ও ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে ২০১৮ সাল থেকে অনেক মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশকেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সাড়ে ছয় বছরে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে ২৮৬ জন। এমনকি ২০২৪ সালে নির্বাচনের পর থেকে জুলাই পর্যন্ত গণপিটুনিতে নিহত হয়েছিল ৩২ জন। শুধু ঢাকাতেই নিহত হয় ১৬ জন। মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘গত ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে মানবাধিকার গুরুত্ব পায়নি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ছিল। গুম হত্যাও চলেছে। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে আমরা গুম নিয়ে একটি কমিশন করার কথা বলছিলাম, তখন আমাদের দাবিগুলোকে উপেক্ষা করা হয়। আমাদের ধারণা ছিল ৬০০ থেকে ৭০০ জন গুমের শিকার হয়। কিন্তু ৫ আগস্টের পর ১ হাজার ৬০০ জনের গুমের তথ্য প্রকাশ পায়। যারা ফিরে এসেছেন তারা কেউ কেউ মুখ খুলেছেন।
২০০৪ সালের পর থেকে ২০ বছরে ৩ থেকে ৪ হাজার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ৫ আগস্টের পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়ে যায়নি। যদিও তা কমে হাতে গোনা অবস্থায় এসেছে । সরকার পতনের পর ‘মব জাস্টিসের’ শিকার হয় স্বৈরাচারী সরকারের সহযোগী ও সমর্থকদের অনেকে। কিন্তু একটি মব হত্যাও মেনে নেওয়া যায় না। নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বিগত দিনের চেয়ে কমে এলেও বন্ধ হয়নি। রাষ্ট্রীয় হেফাজতে হত্যা কোনোভাবেই কাম্য নয় কিন্তু তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। এখনো সরকারের মধ্যে এক ধরনের শিথিলতা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। মানুষের মধ্যে এখনো অস্থিরতা কাজ করছে। সুস্পষ্ট লক্ষ্য নিয়ে রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করলে তাদের জবাবদিহি এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মানসিকতা থাকলেই মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হবে ।
পুলিশের জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর তথ্যমতে চলতি বছর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ফোনকলের ভিত্তিতে ৯ হাজার ৭১৪টি স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে নির্যাতনের ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়। এ সময় ৮৩৯টি নারী হত্যা-সম্পর্কিত কল আসে। গত ১০ মাসে ৯৯৯-এ ১ হাজার ৭৯টি নারী নির্যাতনের সেবা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ড. ফওজিয়া মোসলেম মনে করেন নারী অধিকার কমিশন গঠন করা হলেও সরকার নারীর অধিকার বিষয়ে খুব স্পষ্ট ও জোরালো অবস্থান নেয়নি। নারী হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনাগুলো সমাজে বিদ্যমান আছে। ‘বৈষম্যবিরোধী রাষ্ট্র গঠনে নারী-পুরুষের সমতা সৃষ্টি গুরুত্বপূর্ণ’—উল্লেখ করে সভাপতি বলেন, নারীর শিক্ষা ও কর্মের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি, সম্পত্তিতে অধিকার ও কোটা ব্যবস্থাসহ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
জাতীয় মানবাধিকার সচিব কমিশনের সেবাস্টিন রেমা বলেন, নারীর অধিকার রক্ষায় কমিশনে আলাদা একটি কমিটি আছে। স্বামী -স্ত্রীর বিবাদ মীমাংসার জন্য কাজ করছে আরও একটি টিম। মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে কমিশন সরকারের সংশ্লিষ্ট উইংগুলোকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সুপারিশ করে। তিনি মনে করেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কঠোর আইন ও আইনের শাসন প্রয়োজন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা পৃথক বাণী দিয়েছেন।