সম্প্রতি নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এটিভি ইউএসএ’র আইকনিক অ্যাওয়ার্ডে সেরা উপস্থাপক হিসেবে পুরস্কৃত হলেন শারমিন সিরাজ সোনিয়া। নিউইয়র্কের বাঙালি কমিউনিটিতে প্রতি সপ্তাহেই নিয়মিত বিভিন্ন আঙ্গিকের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এর অধিকাংশ অনুষ্ঠানই এখন সঞ্চালনা করেন সোনিয়া।
নিজের এই পরিচয়ের ব্যাপ্তি প্রসঙ্গে সোনিয়া বলেন,‘সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে আসছি। প্রতিনিয়তই নিজেকে নতুন করেই উপস্থাপন করতে চাই কাজের ভেতরে। এর ভেতরে একজন নারী হিসেবে বাধা আসে যেমন, নানান বুলিংয়ের শিকারও হতে হয় কিছু নোংরা মানুষের। তবে সমাজে ভালো কিছু মানুষের অনুপ্রেরণা পাই বলেই কাজ করে যেতে পারি।’
উল্লেখ্য, আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বাংলাদেশি কমিউনিটিভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শারমিনা সিরাজ সোনিয়া উপস্থাপনা করেন। সোনিয়া নামে সবাই চেনে তাকে। ফোবানা, এনএবিসি থেকে শুরু করে বৃহত্তর ইভেন্টে তিনি কাজ করেছেন। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ডদল মাইলস তাদের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমেরিকা সফরে আসে। সেবার সোনিয়া উত্তর আমেরিকায় তাদের অফিশিয়াল পার্টনার হিসেবে কাজ করেন।
ব্যক্তিজীবনে এর মাঝে এস আই টুটুলের সাথে ঘর সংসারের খবরও প্রকাশ পায়। যদিও সে সম্পর্ক বা সংসার যাই বলা হোক না কেন তা টেকেনি। একজন সিঙ্গল মাদার হিসেবে জীবনের এই চলার পথকে কতটা মসৃন মনে করেন সোনিয়া? এমন প্রশ্নে সোনিয়া বলেন, ‘দেখুন এমনিতে শোবিজে একজন নারীর সাফল্য খুব একটা ভালোভাবে কেউ দেখতে পারেনা। সম্পর্কে জড়ানো বা একা থাকা বলেন। জীবনের কোনো কিছুই আমি ভুল বলতে চাই না। নিয়তির কাছ থেকে শিক্ষা হিসেবে দেখি এসব কিছুই। সময়ই আসলে মানুষকে শেখায়। আমিও শিখেছি। আমি নিজের পেশাগত জায়গায় যেমন সততার সাথে কাজ করি। ব্যক্তিজীবনেও আমার কোনো গোপন রহস্য নেই। তাই অকপটে এই সমাজের কিছু কুরুচিপূর্ণ মানুষের কথা এড়িয়ে শুধু নিজের কাজটিই করে যেতে চাই। আর সিঙ্গল মাদারদের এ সমাজে অনেককিছুই সহ্য করতে হয়।’
উপস্থাপনার জন্য প্রবাসে বহুবার সোনিয়া পুরস্কৃত হয়েছেন। নিউজার্সি স্টেট আয়োজিত আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন। বাংলাদেশে থাকাকালে সোনিয়া বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপন চিত্রে অংশ নেন। সিমেন্স মোবাইল, এলিট চা, সেজান জুস, প্যাগাসাস কেডস, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকসহ আরও অনেক বিজ্ঞাপনে তিনি কাজ করেছেন। ২০০২ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মিস বাংলাদেশ ফটোজেনিক হয়েছিলেন।
সোনিয়ার জন্ম ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায়। তবে তার শিকড় বরিশালের গৌরনদীতে। খুব অল্প বয়সে নাচে হাতেখড়ি। বুলবুল ললিতকলা একাডেমি ও সুরঙ্গমা থেকে নাচে প্রশিক্ষণ পান তিনি। দুই দুইবার উচ্চাঙ্গ নৃত্যে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হয়ে পৃথিবীর বহু দেশ সফর করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক দলের হয়ে পারফরমেন্স করেন। তখন থেকে নাচের পাশাপাশি মডেলিং শুরু করেন। পরে শুরু করেন উপস্থাপনা। বর্তমানে উপস্থাপনা নিয়েই তার সব ব্যস্ততা।
২০ বছর ধরে তিনি আমেরিকায় বসবাস করছেন। তবে এর মধ্যে কয়েক বছর বাংলাদেশে ছিলেন। সে সময় চ্যানেল নাইন, এশিয়ান টিভি, একুশে টিভি ও এটিএন বাংলায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেছেন। সোনিয়া দুবাই ভিত্তিক আর এ কে টিভিতেও কাজ করেছেন। সর্বশেষ তিনি এটিভি ইউএসএর জন্য একটি ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল বিষয়ক একটি নিয়মিত শো করতে যাচ্ছেন। খুব শিগগিরই অনুষ্ঠানটি নিয়ে তিনি নিয়মিত দর্শকের সামনে হাজির হবেন।