রোববার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

টানা ছুটিতে পর্যটকের ঢল রাঙ্গামাটি-সাজেকে

আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:০৯

এলোমেলো সারিতে সাজানো উঁচু-নিচু, ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়। যেদিকে চোখ যায় স্বচ্ছ পানি আর বিস্তীর্ণ সবুজের হাতছানি। দিগন্তজুড়ে সবুজের সমারোহ। সে এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমির পাহাড়ি জনপদ রাঙ্গামাটি। যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা দৃশ্য। আঁকাবাঁকা কাপ্তাই লেক। চারদিকে স্বচ্ছ জলধারা। কাপ্তাই লেক মিশেছে প্রকৃতির সঙ্গে অপরূপ সাজে। সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে অসংখ্য পাহাড়ি ঝর্ণার কলতান আরও আকর্ষণীয় করেছে।

এমন উন্মাদ করা প্রকৃতির অদ্ভূত সৌন্দর্যের আঁধারে মিলিয়ে যেতে কার না মন চায়। ইচ্ছে হয় যেন অজান্তে হারিয়ে যেতে দূরে-বহুদূরে। মন চায় ইচ্ছে মতো ঘুরে বেড়াতে। তাই শত কর্মব্যস্ততার ফাঁকে সবাই ছুটে চলছে অবসাদ দূর করতে পাহাড়ি জনপদ রাঙ্গামাটিতে। টানা ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে অনিন্দ্য সুন্দর হ্রদ-পাহাড়ের শহর পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি ও মেঘের রাজ্য সাজেকে। দেশের বিনোদনের অন্যতম জনপ্রিয় সাজেক ভ্যালি এখন পর্যটকে ভরপুর। হোটেল-মোটেল প্রায় শতভাগ বুকিং।

শীতের এই সময়টা উপভোগ করতে সাজেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পর্যটক ভিড় করছে। এমন পর্যটকের উপস্থিতিতে খুশি ব্যবসায়ীরাও। নানা প্রতিকূলতার অবসানের পর অবশেষে রাঙ্গামাটি ও সাজেকে পর্যটকদের ঢল নামাতে সর্বত্র যেন আনন্দের বন্যা বইছে। সাজেকের পাশাপাশি গত কয়েকদিন রাঙ্গামাটিতে প্রায় তিন হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটেছে বলে জানা গেছে।

১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর সরকারির ছুটি মাঝে রোববার একদিন ছুটি নিলে ১৬ ডিসেম্বর আবার সরকারি ছুটি পাচ্ছেন চাকুরিজীবীরা। এই বন্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে পর্যটকরা ছুটছেন রাঙ্গামাটি ও সাজেকে। রাঙ্গামাটির সবুজ পাহাড়ের হাতছানিতে যেন ছুটে চলেছেন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। এমনি এক নৈসর্গিক আবেশ আর কাপ্তাই লেকের সমাবেশ ভ্রমণপিপাসুদের সত্যিই উদাস করে তুলেছে। পর্যটনের জন্য এ ভরা মৌসুমে হ্রদ পাহাড়ের জনপদ রাঙ্গামাটিতে প্রতিদিন আগত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। শুক্র ও শনিবারসহ ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকের পদচারণয় কোলাহল বাড়ছে পর্যটন স্পটগুলোতে। প্রকৃতি-প্রেমীদের প্রতিনিয়তই যেন কাছে টানছে কাপ্তাই লেকের স্বচ্ছ জলধারা। স্বচ্ছ জলধারায় আনন্দ উপভোগ করতে নৌভ্রমণে যাচ্ছেন মনোরম কাপ্তাই লেকে।

গাড়িতে পর্যটকদের আগমন।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি। এর উত্তরে খাগড়াছড়ি জেলা, দক্ষিণে বান্দরবান, পূর্বে ভারতের মিজোরাম রাজ্য আর পশ্চিমে চট্টগ্রাম জেলা। জেলার মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি কন্যা কর্ণফুলী নদী। মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। যার উৎপত্তি স্থল ভারতের মিজোরাম রাজ্যের লুসাই পাহাড়। কর্ণফুলী থেকে উৎপত্তি হয়েছে চেঙ্গী, মাইনি, কাঁচালং, সুবলং, রাইংখিয়ং, বরকল, হরিণা। এসব নদী মিলিয়ে গেছে কাপ্তাই লেকে। চারদিকে লেক পরিবেষ্টিত রাঙ্গামাটি জেলা গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়ের সমন্বয়ে। পাহাড়গুলো সবুজ বনবাদাড়ে ঘেরা। পাহাড়, বন আর স্বচ্ছ জলধারা মিলে সৃষ্টি হয়েছে রাঙ্গামাটির নৈসর্গিক আবেশ। রাঙ্গামাটি জেলাজুড়ে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় ও উপভোগ্য স্থান। গড়ে উঠেছে অনেক দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পট।

পর্যটক আসায় কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা। তারা বলছে, পর্যটকদের উপর নির্ভর করে আমাদের ব্যবসা গড়ে উঠেছে। পর্যটকরা আসলে আমাদের জীবিকার চাকা ঘুরে। পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে সাজেকসহ জেলা সদরের ঝুলন্ত সেতু, সুবলং ঝর্ণা, পলওয়েল পার্কসহ জেলার পর্যটন স্পটগুলোতে ।

ঝুলন্ত সেতু দেখতে আসা রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা পর্যটক মো. ফারুক হোসেন বলেন, ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষা শেষ হওয়ায় সপরিবারে রাঙ্গামাটিতে ছুটে এসেছি। এসে হোটেল কক্ষে বসে না থেকে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েছি। রাঙ্গামাটিতে অনেক ভাল লাগছে। আগামী দু’দিন রাঙ্গামাটি ঘুরে সাজেক চলে যাবো ঘুরতে।

রাঙ্গামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, গত কয়েকদিনে রাঙ্গামাটিতে বেশ পর্যটক এসেছে। শীতের তীব্রতা বাড়ছে। আশা করছি, এ শীতের মওসুমে ভাল পর্যটক আসবে এবং সরকারের রাজস্ব আয়টাও ভাল যাবে। এদিকে জেলার আরেক পর্যটক নগরী মেঘের রাজ্য খ্যাত বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। সেখানে গত কয়েকদিনে তিন হাজারের মতো পর্যটকের আগমন ঘটেছে বলে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে।

সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জন বলেন, সাজেকে গত কয়েক দিনে ভালো পর্যটক আসতে শুরু করেছে। হোটেল-মোটেলগুলো ভালো বুকিং হয়েছে। মূলত ছেলে-মেয়েদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ায় পর্যটকের সংখ্যাটা বাড়তে শুরু করেছে। তিনি সাজেকে ভ্রমণে এসে কেউ কোনো সমস্যায় পড়লে কিংবা বাড়তি ভাড়া দাবি করলে সমিতির সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছেন।

এদিকে রাঙ্গামাটি জেলা সদরের বিভিন্ন স্পটগুলোতেও পর্যটকের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্ক, আরণ্যকসহ বিভিন্ন স্পটে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। এছাড়া কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ নীল জলরাশি ও পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা সুবলংয়ের উদ্দেশ্যে নৌবিহারও করেছেন।

ইত্তেফাক/এমএএস
 
unib