ঈশ্বরদী সরকারি কলেজে শিক্ষক-সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। অনার্স, স্নাতক (পাশ) ও উচ্চ মাধ্যমিকের মোট ১০ হাজার ৬৫৭ জন শিক্ষার্থীর পাঠদানের জন্য রয়েছেন মাত্র ৩৩ জন শিক্ষক। এতে সময়সূচি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
জানা যায়, ৪৫ বছর আগে কলেজ জাতীয়করণের সময়ে সৃষ্ট পদে শিক্ষকের সংখ্যা ছিল ৪৪ জন। পরে আরো বিষয় খোলা হয়েছে। অনার্স কোর্স চালুসহ কলেজের ক্লাস অনেক বাড়লেও সৃষ্ট পদে বিধি অনুযায়ী শিক্ষকের পদ বাড়ানো হয়নি। বরং বর্তমানে থাকা ৪৪ পদের মধ্যে এর ১১টি শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। শিক্ষক-সংকটে নিয়মিত ক্লাস নিতে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষকরা বলছেন, চলমান পরিস্থিতিতে জোড়াতালি দিয়ে কোনোমতে চালানো হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। যে কারণে শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট নির্ভর হয়ে পড়ছে।
জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১:৩০ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। আর ঈশ্বরদী সরকারি কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১: ৩২২.৯৪। অর্থাৎ ৩২৩ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন মাত্র একজন শিক্ষক।
সরেজমিনে অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জনপদ ঈশ্বরদীতে ১৯৬৩ সালে স্থাপিত এই কলেজটি। ১৯৮৬ সালে জাতীয়করণ করা হয়। জাতীয়করণের সময় স্নাতক (পাশ) কোর্স এবং উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি চালু ছিল।
পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে ১২টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়েছে। অর্থনীতি ও প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে অনার্স কোর্স চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এই সময়কালে কলেজে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে। পাঁচটি বিশালায়তনের ভবন রয়েছে। লিফটের ব্যবস্থাসহ ছয় তলাবিশিষ্ট আরো একটি ভবন নির্মাণাধীন।
২৯টি কক্ষে চলে পাঠদান। অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, শিক্ষক মিলনায়তন, অডিটোরিয়াম এবং ১২টি বিভাগ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও আধুনিক সাজে সজ্জিত। বিশালাকৃতির গ্রন্থাগার থাকলেও লাইব্রেরিয়ান নেই। রয়েছে আধুনিক ডিজিটাল ল্যাব ও চারটি বিজ্ঞানাগার। বিজ্ঞানাগারের প্রদর্শকের দুইটি পদও শূন্য।
উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে এবং বাণিজ্যের দুইটি বিষয়ের অনার্সে আইসিটি বিষয় বাধ্যতামূলক হলেও শিক্ষক নেই। তেমনি কলেজে কৃষিবিজ্ঞান বিষয় খোলা হলেও নেই শিক্ষক। পদার্থ, ব্যবস্থাপনা ও গণিতের শিক্ষকরা আইসিটির ক্লাস নেন বলে অধ্যক্ষ জানান।
কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর এস এম রবিউল ইসলাম বলেন, ‘জাতীয়করণের সময় কলেজে ৪৪টি পদ সৃষ্ট হয়। বর্তমানে ১১টি পদে শিক্ষক নেই। জাতীয়করণের পর অনার্স কোর্স চালুসহ কয়েকটি নতুন বিষয় খোলায় বেড়েছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। কিন্তু নতুন করে শিক্ষক পদ সৃষ্ট হচ্ছে না। ফলে জোড়াতালি দিয়ে কোনো কোনো বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে একাধিক বার চাহিদাপত্র পাঠানো হলেও কোনো ব্যবস্থা হয়নি।’
তিনি আরও জানান, বিধিমালা অনুযায়ী সরকারি কলেজে অনার্স শ্রেণিতে অধ্যাপক এক জন, সহযোগী অধ্যাপক দুই জন, সহকারী অধ্যাপক তিন জন এবং চার জন প্রভাষকসহ মোট ১০জন শিক্ষক থাকার কথা। সে হিসেবে শুধু অনার্সের ১৪টি বিভাগে ১৪০ জন শিক্ষক থাকার কথা। এ ছাড়াও রয়েছে আইসিটি ও কৃষিবিজ্ঞানসহ উচ্চ মাধ্যমিকের আরও কয়েকটি বিষয়। সাত একর জমির ওপরে প্রতিষ্ঠিত কলেজটির অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হলেও নতুন শিক্ষক পদ সৃজন করা হয়নি। ফলে মাস্টার্স খোলা যাচ্ছেনা।