মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

গ্রিনল্যান্ড ও পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নিতে ক্রমাগত হুমকি ট্রাম্পের

আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:২৭

গ্রিনল্যান্ড ও পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছুদিন আগে যে ইচ্ছাপোষণ করেছিলেন, সেখান থেকে সরে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং ওই দুই এলাকাকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অভিহিত করে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প।

ফ্লোরিডায় মার-এ-লাগো এস্টেটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, গ্রিনল্যান্ড এবং পানামা খাল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এগুলোকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য মনে করেন। 

তবে ডেনমার্ক ও পানামা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, তারা কোনো পরিস্থিতিতেই নিজেদের ভূমির মালিকানা ছাড়বে না।

ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করার চেষ্টা করতে তিনি অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার করবেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্তকে ‘কৃত্রিমভাবে আঁকা রেখা’ বলেছেন।

এই দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত বিশ্বে যেকোনো দুই দেশের মধ্যকার সবচেয়ে দীর্ঘ সীমান্ত। ১৭০০ সালের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় করা চুক্তিতে এই সীমান্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল।

ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কানাডাকে রক্ষায় প্রতি বছর বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। তিনি কানাডার গাড়ি, কাঠ ও দুগ্ধপণ্য আমদানির সমালোচনা করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাদের আমাদের রাজ্য হওয়া উচিত।

তবে বিদায়ী কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো স্পষ্ট করে বলেন, দুই দেশের একীভূত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, এটার কোনো সম্ভাবনাই নেই।

সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প পরিবেশগত নিয়ম, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থা এবং তার বিরুদ্ধে চলমান বিভিন্ন মামলা নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমালোচনা করেন।

তিনি মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে ‘আমেরিকা উপসাগর’ রাখার প্রস্তাব দেন। এছাড়া বায়ু শক্তির বিরুদ্ধে কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, বায়ুচালিত টারবাইন তিমিদের পাগল বানাচ্ছে।

এই সময় ট্রাম্পের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র গ্রিনল্যান্ড সফরে ছিলেন। গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুক যাওয়ার আগে তিনি জানান, এটি তার ব্যক্তিগত সফর। তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন, তবে কোনো সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা তার নেই।

ট্রাম্পের ছেলের সফর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মিতে ফ্রেডেরিকসেন ডেনিশ টেলিভিশনে বলেছেন, গ্রিনল্যান্ড গ্রিনল্যান্ডবাসীর। কেবল স্থানীয় জনগণই এর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।

তিনি একমত যে, গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ন্যাটো মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা ডেনমার্কের প্রয়োজন।

গ্রিনল্যান্ড উত্তর আমেরিকা থেকে ইউরোপে যাওয়ার সবচেয়ে ছোট রুটে অবস্থিত। সেখানে একটি বড় আমেরিকান মহাকাশ স্থাপনা রয়েছে। এছাড়া, গ্রিনল্যান্ডে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিরল খনিজ সম্পদের মজুদ রয়েছে, যা ব্যাটারি এবং আধুনিক প্রযুক্তি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ।

পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো ট্রাম্পের দাবিকে নাকচ করে বলেন, খালে চীনের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ নেই।

পানামা খালের প্রবেশমুখের দুটি বন্দর পরিচালনা করে হংকং-ভিত্তিক কোম্পানি সিকে হাচিসন হোল্ডিংস। খালটি ১৯০০ সালের প্রথম দিকে নির্মাণ করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে। প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের শাসনামলে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, খালটি ধীরে ধীরে পানামার হাতে হস্তান্তর করা হয়।

ট্রাম্প বলেন, পানামা খাল পানামার হাতে দেওয়া অনেক বড় ভুল ছিল।কার্টার একজন ভালো মানুষ ছিলেন... কিন্তু এটি ছিল বড় ভুল।

সূত্র:বিবিসি

ইত্তেফাক/আরএস