চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বিগত সময়ে প্রায় ১৫টি মেগা প্রকল্পের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তে নামছে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিটি শনিবার (১১ জানুয়ারি) থেকে আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। কমিটির সদস্য স্থপতি জেরিন হোসেন জানান, বিগত সময়ে সিডিএ কর্তৃক সম্পন্ন হওয়া কিংবা চলমান বড় প্রকল্পগুলোর বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে। প্রকল্পগুলোর কাগজপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। তিনি জানান, এটি সম্পন্ন করতে দুই মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ২০০৯ থেকে বিগত সরকারের প্রায় ১৫ বছরে সিডিএর নেওয়া প্রকল্পগুলো নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকজনসহ সিডিএর সংশ্লিষ্টরা জড়িত রয়েছে। বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরের মধ্যে বেশির ভাগ সময় সিডিএর চেয়ারম্যান ছিলেন আবদুচ ছালাম। অভিযোগ রয়েছে, বিগত ১৫ বছর আগে যে সব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সেই প্রকল্পেও পরবর্তী সময় ব্যাপক দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
তদন্ত সূত্রে জানা যায়, বিগত সময়ে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় ছিল কল্পলোক ও অনন্যা আবাসিক এলাকায় বিপুলসংখ্যক লোককে অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রভাবশালী ব্যক্তি যাদের ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি ও স্থাপনা রয়েছে তাদের একপ্রকার ‘উপহার’ হিসেবে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সন্তুষ্ট করতে এই সব প্লট সম্পূর্ণ অবৈধভাবে দেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রাজনীতিক, আমলা, টেলিভিশন উপস্থাপকসহ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন। সিডিএ সূত্রে জানা যায়, সৌভাগ্যবান ঐ সব ব্যক্তি তাদের নামে বরাদ্দকৃত প্লট অধিকাংশই বিক্রি করে দিয়েছেন। সিডিএর একটি স্বার্থান্বেষী গ্রুপও এর সঙ্গে জড়িত। ঐ সব সৌভাগ্যবান প্লট হোল্ডারের তালিকা গতকাল বৃহস্পতিবার কমিটির কাছে উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
সিডিএ সূত্রে জানা যায়, বিগত সময়ের প্রতিটি বড় প্রকল্প গ্রহণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত সংশ্লিষ্টদের তালিকাও প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিগত ১৫ বছরে সিডিএর তিন জন চেয়ারম্যান ছিলেন। তাদের মধ্যে এক জনই পাঁচ বার মেয়াদ বাড়িয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। সিডিএতে কর্মরত অনেক কর্মকর্তা ইতিমধ্যে অবসরে চলে গেছেন।
সিডিএ কর্তৃক বিশেষ বিবেচনায় সিডিএর অনন্যা আবাসিক এলাকা থেকে ৫৯ জনকে একসঙ্গে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, ড. হাছান মাহমুদ, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ডা. আফসারুল আমিন, দিলীপ বড়ুয়া, এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, এম এ লতিফ, বীর বাহাদুর, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, শামসুল হক চৌধুরী, দীপংকর তালুকদার, মঈনুদ্দিন খান বাদল, চেমন আরা বেগম, আবু সুফিয়ান প্রমুখ।
