বায়ুদূষণ মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন মার্কিন বায়ুমান বিষয়ক বিজ্ঞান দূত ড. জেমি শাওয়ার।
গত ১২ জানুয়ারি থেকে আজ ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা সফর করেছেন তিনি। সফরকালে ড. শাওয়ার স্থানীয় শিক্ষাবিদ, সরকারি কর্মকর্তা এবং এনজিওগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি বায়ুর মানো উন্নয়নের জন্য বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ও কার্যকর সমাধান শেয়ার করেন।
তার এই সফরে বায়ুর মান ব্যবস্থাপনা, কার্যকর নীতি এবং শিক্ষাগত সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে উন্নত মনিটরিং সিস্টেম, পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি এবং বহুমুখী অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি জোর দেন।
ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন-ম্যাডিসনের অধ্যাপক এবং উইসকনসিন স্টেট ল্যাবরেটরি অফ হাইজিনের পরিচালক ড. শাওয়ার ২০১৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বায়ুমান বিষয়ক বিজ্ঞান দূত হিসেবে কাজ করছেন। ১২ জানুয়ারি ড. শাওয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়ুর মান গবেষণা এবং পরিবেশগত নীতি আলোচনায় বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
অনুষ্ঠানে ড. শাওয়ার ঢাকার গুরুতর বায়ুদূষণ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বিদ্যুৎকেন্দ্র, যানবাহন, বায়োমাস পোড়ানো, বর্জ্য দহন, নির্মাণকাজের ধুলা এবং ইটভাটার মতো বিষয়গুলোকে দূষণের মূল উৎস হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি উন্নত মনিটরিং সিস্টেম এবং দূষণের উৎস বিশ্লেষণমূলক গবেষণার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন, যা নীতি নির্ধারণে সাহায্য করবে এবং মৌসুমি ও স্থানীয় দূষণ সমস্যাগুলো সমাধানে সহযোগিতা করবে।
ড. শাওয়ার বায়ুদূষণ মোকাবিলার জন্য বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। যার মধ্যে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহার, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পরিবহন খাতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি প্রয়োগ, বর্জ্য পোড়ানো কমানোর জন্য উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং ধুলা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত। তিনি সরকার, শিল্পখাত, নাগরিক সমাজ এবং শিক্ষাবিদদের মধ্যে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে টেকসই বায়ু মানোন্নয়ন সমাধান বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
বায়ুদূষণের বহুমুখী কারণ উপলব্ধি করে ড. শাওয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পরিবহন খাতের অংশীদারদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং 'PM2.5'-সহ অন্যান্য বায়ু দূষণকারী গ্যাসের নির্গমন নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করেন।
১৪ জানুয়ারি প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ যন্ত্র পরিদর্শন করেন, যা দূতাবাস প্রাঙ্গণে 'PM2.5' পরিমাপ করে। তারা একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দেন, যেখানে বাংলাদেশের বায়ুর গুণমান চ্যালেঞ্জ এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রাপ্ত পরিজ্ঞান শেয়ার করা হয়।
সফরকালে ড. শাওয়ারের সঙ্গী ছিলেন কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির ড. জিল বামগার্টনার এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইস ইউনিভার্সিটির ড. বেঞ্জামিন ডি ফোয়া। ড. বামগার্টনার শহুরে এলাকায় পরিবেশ দূষণের মানব স্বাস্থ্য প্রভাব নিয়ে কাজ করেন এবং ড. ডি ফোয়া কম্পিউটার মডেলের মাধ্যমে বায়ু দূষণের উৎস নিয়ে গবেষণা করেন। তারা দুজনই দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় তাদের বিশেষজ্ঞ জ্ঞান শেয়ার করেন। এই সফর জ্ঞান বিনিময় এবং সম্মিলিত নীতি উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের বায়ু মানোন্নয়ন প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।