মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

৩০০ বছরের পুরোনো নাটোর রাজবাড়িটি জৌলুস হারাচ্ছে

আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:০০

৩০০ বছর আগে নির্মিত অর্ধবঙ্গেশ্বরীখ্যাত নাটোর রানী ভবানী রাজবাড়িটি তার জৌলুস হারাচ্ছে। রাজা রামজীবন প্রায় ৫০ একর জমির ওপরে এ রাজবাড়ি নির্মাণ করেন। এরপর অনেক রাজা এ রাজবংশ শাসন করেছেন। এখন রাজারানী না থাকলেও রয়েছে, তাদের স্মৃতিবিজড়িত রাজবাড়িটি। যুগ যুগ ধরে অযত্নে হারিয়ে যেতে বসেছে তার স্থাপত্যশৈলী ও সৌন্দর্য। রাজবাড়িটির দায়িত্ব প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নিলেও তেমন কোনো বড় সংস্কারের মুখ দেখেনি এই নিদর্শনটি। ফলে সংস্কারের অভাবে দিনে দিনে নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন ভবনের অবকাঠামো ও স্থাপত্যশিল্প।

২০১৮ সালে বড় তরফটি সংস্কার হিসেবে রং করা হয়। তবে ছোট তরফের কিছু ভাঙা কাঠের দরজা-জানালা মেরামতের কাজ করা হলেও এখনো রং করা হয়নি। তবে বড় তরফের দক্ষিণে বৈঠক খানাটি রং করে কিছুটা সৌন্দর্য বাড়ানো হয়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে রাজবাড়ির দেওয়ালে শুধু রং ও ফাটল বন্ধ করা ছাড়া তেমন কোনো কাজ করতে দেখা যায়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রাচীন এ স্থাপত্যশৈলীর অনেক অংশ প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগে নষ্ট হয়েছে। হারিয়েছে তার সৌন্দর্য। বিভিন্ন ভবনের গায়ে নিখুঁত নিমার্ণ কৌশল দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। তখনকার শিল্পীদের নিখুঁত হাতে প্রাসাদের গায়ে আঁকা চমৎকার শিল্পকর্ম আজ জানান দিচ্ছে তাদের কর্মদক্ষতা। দেওয়ালে দেওয়ালে বিভিন্ন প্রাণীর মূর্তি প্রকাশ পাচ্ছে। কিছু ভবনের ওপর থেকে ইট মাটি খসে খসে পড়ছে। অনেক ভবনে ময়লা-আবর্জনা স্তূপে পরিণত হয়েছে।

জানা যায়, ১৭০৬ খ্রিষ্টাব্দে থেকে ১৭১০ খ্রিষ্টাব্দে রাজা রামজীবন নাটোর রাজবংশের প্রথম রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। ১৭৩৪ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পর তার দত্তকপুত্র রামকান্ত রাজা হন। ১৭৪৮ খ্রিষ্টাব্দে রামকান্তের মৃত্যুর পর রানী ভবানীর ওপর জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এই রাজবাড়ি চত্বরে ছোট বড় আটটি ভবন, ছোট বড় মিলে পাঁচটি পুকুর রয়েছে। শিবমন্দিরসহ বেশ কয়েকটি মন্দির রয়েছে। রাজবাড়ির নিরাপত্তার জন্য চারদিকে ঘিরে আছে দুই স্তরের বেড়চৌকি, যা আজ সেই অবস্থায় আছে। অন্যদিকে এক ভূমিকম্পে রানী মহলের বেশির ভাগই মাটির নিচে দেবে গেছে।

ঘুরতে আসা পাবনার বাসিন্দা নাসরিন আক্তার বলেন, জায়গাটি অনেক নিরিবিলি। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং পরিপাটি থাকলে আরো ভালো লাগত। বিশেষ করে প্রাসাদগুলো অনেক পুরোনো প্রাচীন। সেগুলোকে যত্ন নিয়ে সংস্কার করলে আরো সুন্দর লাগত। দর্শনার্থী শামীম হোসেন বলেন, 'পুরো রাজবাড়িটি ঘুরে ঘুরে দেখলাম, ভালো লাগল। তবে ভালোভাবে সংস্কার করলে ভবনগুলো প্রকৃত সৌন্দর্য ফিরে পেত। এছাড়া পুরোনো সব নির্দেশনগুলো থাকা দরকার ছিল। স্কুলশিক্ষক মাহাবুর রহমান বলেন, রানী ভবানী হিসেবে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়িটির অনেক ইতিহাস রয়েছে। এ রাজবাড়ির অনেক ইতিহাস পড়েছি, আজ দেখতে এসেছি। এখানে যদি নতুন করে সংস্কারের মাধ্যমে ফুলগাছ, লতাপাতা দিয়ে সৌন্দর্য বাড়ানো যেত, তাহলে বড় একটি পর্যটন স্থান পেত। এসব নিদর্শন মানুষের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে।

নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আরিফ হোসেন বলেন, 'নাটোর রানী ভবানীর রাজবাড়িটি দেশব্যাপী অনেক সুনাম রয়েছে। আমাদের একটি বড় পর্যটন স্থান এটি। এখানে প্রতি বছর দেশ-বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক আসেন। ধাপে ধাপে ভবনগুলোর সংস্কার চলছে।'

ইত্তেফাক/এনএন
 
unib