বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘শুনতে পাচ্ছি, সরকারের ভেতর থেকে বিভিন্ন লোক রাজনৈতিক দল গঠন করার চেষ্টা করছে। উপদেষ্টারা দল গঠন করলে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনগণ প্রশ্ন করতেই পারে। যখন শুনি, আগে সংস্কার পরে নির্বাচন—এ যেন শেখ হাসিনার সেই কথারই প্রতিধ্বনি, আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র। এ ধরনের বক্তব্য এই সরকারের কোনো উপদেষ্টার মুখে শোভা পায় না। আমরা দেখছি, সরকার গঠনের পরে কোনো কোনো উপদেষ্টা বিএনপির প্রতি অত্যন্ত বিরূপ ধারণা দিয়ে কেউ প্রকাশ্যে, কেউ অপ্রকাশ্যে কথা বলছেন। যদি এসব কথা আসে, তাহলে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করা অন্যান্য রাজনৈতিক দল মনে করবে, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ধরনের একটা মাস্টারপ্ল্যানের মধ্যে রয়েছে।’
শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক এবং বাংলাদেশের আধুনিক ক্রিকেটের রূপকার আরাফাত রহমান কোকোর দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর বনানী কবরস্থান প্রাঙ্গণে এক দোয়া অনুষ্ঠানে রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন।
রিজভী যোগ করেন, যে গণতন্ত্র ও অবাধ নির্বাচনের জন্য ১৬ বছর ধরে এ দেশের মানুষ অপেক্ষা করেছে, লড়াই করেছে, জীবন উৎসর্গ করেছে, সেই নির্বাচন নিয়ে এত দ্বিধা কেন, এত গড়িমসি কেন। এটাই জনগণের জিজ্ঞাসা। সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন,গত এক মাসে সব নিত্যপণ্যের মূল্য কেজিতে ২ থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের এই যে দৃষ্টিহীনতা, এর সমালোচনা করা যাবে না? সরকারের প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ না করলে তার কি সমালোচনা করা যাবে না? তাহলে কীসের ভয় দেখান যে, এক-এগারোর পুনরাবৃত্তি হবে।
রিজভী বলেন, ‘আমরা সব ঘটনা অতিক্রম করে, বুক চিতিয়ে আমরা বছরের পর বছর রাজপথের লড়াইয়ে থেকেছি। কোনটাকে সমর্থন করতে হবে আর কোনটাকে নয়, আর কোন বিষয়ে কথা বলতে হবে, এটা আজ উপদেষ্টারা দেশের প্রাজ্ঞ-বিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের শেখাবেন? আমাদের সব আস্থা তো আপনাদের ওপর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের কথা হলো, কেন এত গড়িমসি, ডেটলাইন নেই কেন, কেন হাসিনার কথা পুনরাবৃত্তি হবে যে, আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র। আমরা এ কথা শুনতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘একটি মুক্ত পরিবেশে বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণ করতে বিগত ১৬ বছরে এত আত্মদান, এত রক্ত ঝরেছে। তার ফলে ৫ আগস্ট আমরা পৃথিবীকাঁপানো বিজয় দেখেছি। এই আন্দোলনের পর একটি অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সেই সরকারকে সমর্থন দিয়েছে। জনগণের প্রত্যাশা, এই সরকার নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু যখন শুনি, আগে সংস্কার পরে নির্বাচন—এ যেন মনে হয় শেখ হাসিনার সেই কথারই প্রতিধ্বনি যে,আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র। এটা তো অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উপদেষ্টার কাছ থেকে শোভা পায় না।’
সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক এক জরিপে এসেছে, দেশের বেশির ভাগ মানুষ জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন চায়। এ প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরো সরকারি সংস্থা। তাদের দিয়ে জরিপ করাচ্ছেন। তাতে নাকি জনগণ বলছে, আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, পরে জাতীয় নির্বাচন। আপনি যদি সরকারি সংস্থা দিয়ে জরিপ করেন, তারা তো সরকারের মুখ চেয়ে কথা বলবে। কিন্তু আপামর জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলেন, তারা কী বলে দেখেন। আপনাদের আচরণ নিরপেক্ষ না হলে তো সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনগণ প্রশ্ন তুলবেই।’
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের পর প্রশাসনে এখনো ৭০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগের দোসর। তারাই দেশ চালাচ্ছেন। কিন্তু যারা বঞ্চিত হয়েছিলেন, তাদের হয়তো কয়েক জনকে প্রমোশন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদেরকে কোনো গুরুত্ব দেননি। অধিকাংশ সচিব, অধিকাংশ প্রশাসনের ব্যক্তিরা হলেন ফ্যাসিস্টদের দোসর। তাদের দিয়েই তো দেশ চালাচ্ছেন তাহলে জিনিসপত্রের দাম কমবে কী করে? কী করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করবেন, কারণ ওরাই তো বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মেরে বসে আছে। এ সময় বিএনপি নেতা সাইফুল আলম নীরব, আমিনুল হক, এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।