শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

শজারুর সঙ্গে মানুষের এক মায়াবী মেলবন্ধন

আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:২৬

শিশুর মতোই বিছানায় গড়াগড়ি খায়। কারণে- অকারণে ঘরের বারান্দা ও বাড়ির উঠোনে লুটোপুটি যায়। ক্ষুধা লাগলে বাড়ির কর্তার পেছনে পেছনে ঘুরে অদ্ভুত শব্দ করে৷ পেটে খাবার পড়লেই কর্তার কোলে ওঠে মানব শিশুর মতোই চোখ বুঝে আরাম করে। বিরল বন্যপ্রাণী শজারুর সঙ্গে মানুষের এ যেন এক মায়াবী মেলবন্ধন।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে দশ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি গ্রাম কুশারিয়া। ধলাপাড়া ফরেস্ট রেঞ্জের গজারি বন ৬ ছিটিয়ে গ্রামের দুই পাশে৷ এ গ্রামের এক পণ প্রেমিকের নাম সুমন আহমেদ লিটন। দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে সংসার। সম্প্রতি পরিবারে আরেক সদস্য যোগ হয়েছে। তবে মানব শিশু নয়, বনের বিরল প্রাণী শজারু। পরিবারের সবাই একে আপন করে নিয়েছে। মিলেমিশে বসবাস। পরিবারের এ নতুন সদস্যকে দেখার জন্য প্রতিদিন দূরদূরান্তের লোক আসছে। ইউটিউবের ভিডিও সাড়া ফেলেছে। মিডিয়ায় সরস খবর হচ্ছে।

লিটন জানান, গত এপ্রিলে গৌরেশ্বর গ্রামের কলাবাগান থেকে ইজিবাইকে ফেরার সময় বুনো পথের ধারে একটি কাহিল শজারু ছানা খুঁজে পান। বাড়িতে এনে যত্নআত্তিতে সুস্থ করেন। এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গেই বেড়ে উঠছে। সন্তানের মতোই লালনপালন হচ্ছে। দিনের বেলা কখনোসখনো বিছানায় এক সঙ্গে ঘুমায়। জিহ্বা দিয়ে গাল চেটে
সোহাগ জানায়। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, কোলে বসে আরাম করে টিভি দেখে। কখনো দুষ্টামি শুরু করলে ধমকে থেমে যায়। নাম ধরে ডাকলে নির্ভয়ে কাছে আসে। ক্ষুধা লাগলে পেছনে পই পই করে ঘুরে বেড়ায়। রাগলে শরীরের ফনফনে ধারালো কাটা ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু বুদ্ধিমানের মতো শুধু দেখানো জায়গায় নিয়মিত প্রাকৃতিক কাজ করে।

পরিবারের সবার সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করলেও বাইরের কেউ এসে বিরক্ত করলে কদম ফুলের মতো বিষাক্ত কাটা তা প্রকাশ করে। তৃণভোজী এ শজারুর প্রতিদিনের খাবার ফালি করা আলু, নানা সবজি, গাছের লতাপাতা, বাঁশের কোরল, নরম রুটি ও বিস্কুট । প্রতিদিনের খাবার খরচ ১০০/১৫০ টাকা।

তিনি আরও জানান, কিছুটা বড় হওয়ায় তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে । রাতে বিছানায় ঘুমানো আস্তে আস্তে ছাড়তে থাকে। গভীর রাতে সবার অজান্তে ঘর ছেড়ে নিশাচরের মতো পাড়া বেড়াতে থাকে। অন্যের ঘরের দরজার রাখা জুতো কামড়ে নিয়ে ঘরে ফেরে। নয়তো কারো সবজি খেতে গিয়ে উৎপাত করতে থাকে৷

এমন অবস্থায় বাড়ির আঙিনায় গর্ত করে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। আশ্চর্যের বিষয়, এ কৃত্রিম গর্ত পছন্দ হয়নি৷ বরং দুই পায়ের ধারালো নখে মাটি খুঁড়ে আরেকটি প্যাচালো গর্ত বানিয়ে নেয়। মাস খানেক ধরে সেখানেই ঘুমায়৷ 

প্রতিবেশী শ্যামল চন্দ্র জানান, লিটন সজারুকে অসম্ভব ভালোবাসে। প্রাণী আর মানুষে এতো ভাব নিজে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না।

কুশারিয়া গ্রামের স্কুলশিক্ষক হাফিজুর রহমান জানান, ঘাটাইলের বটতলা ও ঝরকা বিটের উজাড় হওয়া গজারি বনে বিদেশি জাতের আকাশমণি গাছে বনায়ন হওয়ায় আবাসন ও খাদ্যাভাবে বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব বিলীন হচ্ছে। ঝোপজঙ্গলে এখনো বিরল প্রজাতির কিছু সজারুর দেখা মেলে৷ খাদ্যাভাবে এরা বনের আশপাশের কলা ও সবজি বাগানে চড়াও হয়। গৃহস্থরা সে এদের নিধন করে। আশপাশের ক্ষুদ্র নৃ-মানুষ ফাঁদ পেতে শিকার করায় শজারু বিলীন হচ্ছে।

সাত কুয়ার বাসিন্দা হাসান মিয়া জানান, লিটন বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণীকে সন্তানের মতো আগলে রেখে মানবিকতার সুন্দর উদাহরণ স্থাপন করেছেন । ঘাটাইল ঝরকা বন বিটের অফিসার শাহ আলম জানান, তিনি নতুন এসেছেন। বন্যপ্রাণী নিধনের কোনো খবর তার জানা নেই।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি
 
unib