পঞ্চগড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া রিকশাচালক আল আমিনকে (২১) হত্যা ও তার লাশ গুমের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে পঞ্চগড় আদালতে জামিন ও রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাহিদা আকতার জুলিয়েট এ নির্দেশ দেন। এর আগে সকাল ১০টার দিকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালী সাবেক এই মন্ত্রীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একটি প্রিজনভ্যানে কড়া পাহারায় পঞ্চগড় জেলা কারাগারে আনা হয়।
গত বছর ২ ডিসেম্বর নূরুল ইসলাম ওই মামলায় পঞ্চগড় আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। বিচারক আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পঞ্চগড় থানার উপপরিদর্শক মানিক মিয়া তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে পঞ্চগড় জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে অংশ নেন রিকশাচালক আল আমিন (২১)। সেদিন দুপুরে দুই তরুণের সঙ্গে বাড়ি ফেরার পথে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান সাকিবের বাড়ির সামনে তাকে ধরে নিয়ে যান মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কয়েকজন। পরে আওয়ামী লীগের নেতাদের নির্দেশে তার ওপর হামলা চালানো হয় এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করা হয়। তাকে টেনেহিঁচড়ে ছাত্রলীগ নেতা সাদমান সাকিবের বাড়ির দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় আল আমিনের সঙ্গে থাকা রায়হানুল ইসলাম ও সুজন ইসলাম নামের দুই তরুণ আহত হন। তবে তাদের দুজনকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করলেও আল আমিনকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি আদম সুফি বলেন, যেহেতু ভিকটিমকে বা তার মরদেহ পাওয়া যায়নি। তাই রহস্য উদঘাটনের জন্য আসামির রিমান্ড প্রয়োজন ছিল। এটি আদালত অনুধাবন করেছেন বিধায় তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মির্জা সারোয়ার হোসেন বলেন, সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, নূরুল ইসলাম সুজনের মোবাইল ফোনে হত্যা এবং পরে গুমের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা শুনানিতে বলেছি, বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সেই রেকর্ড বের করা সম্ভব। মামলার বাদী আমাদের একটি এফিডেভিট দিয়েছেন। যাতে তিনি বলেছেন, আসামি নূরুল ইসলাম সুজনকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না। তার সঙ্গে কোনো শত্রুতা নেই। আমরা তার রিমান্ড নামঞ্জুর করে জামিনের আবেদন করেছি। কিন্তু আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।