শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

লিবিয়ায় দাফন করা ২৩ জনের কাছে বাংলাদেশি কোনো পরিচয়পত্র পাওয়া যায়নি: রাষ্ট্রদূত

আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৫৯

ভূমধ্যসাগর হয়ে অবৈধ উপায়ে ইতালি যাওয়ার সময় নৌকাডুবির শিকার হয়ে মারা যাওয়া ২৩ ব্যক্তিকে লিবিয়ার ব্রেগাতে দাফন করা হয়েছে। এসব মৃতদেহের অবয়ব দেখে রেড ক্রিসেন্টসহ লিবিয়ার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে, নিহতরা বাংলাদেশের নাগরিক। তবে তাদের কাছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট বা কোনো পরিচয়পত্র পাওয়া যায়নি। 

লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ খায়রুল বাসার রোববার (০২ ফেব্রুয়ারি) ফেসবুক লাইভে এসে এ তথ্য জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা থেকে ২৫ জানুয়ারি রাতে ৫৬ জন অভিবাসী নিয়ে একটি নৌকা সাগরপথে ইতালি রওনা হয়। সম্ভবত সেদিনই রাতে নৌকাটি দুর্ঘটনাকবলিত হয়। গত ২৮,২৯ ও ৩০ জানুয়ারি লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে ব্রেগা নামক এলাকায় লাশগুলো ভেসে আসতে থাকে। ২৮ জানুয়ারি সাতজন, ২৯ জানুয়ারি ১১ জন, ৩০ জানুয়ারি দুজন ও ৩১ জানুয়ারি আরও তিনজন, মোট ২৩টি লাশ উদ্ধার করা হয়।

খায়রুল বাসার বলেন, নৌকাডুবির শিকার আরও দুই ব্যক্তিকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তারা বেনগাজি মিলিশিয়াদের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে ভর্তি রয়েছেন। তাদের পরিচয়ও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাকি ৩১ জনের ভাগ্যে কি ঘটেছে সেটা এখনো অজানা।

তিনি বলেন, অকুস্থলসহ ভূমধ্যসাগরের পুরো পূর্বাঞ্চল বিদ্রোহী সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সেখানকার প্রসিকিউশনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টায় সফল হয়নি ত্রিপলি মিশন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দ্বার-আল লিবিয়া নামের একটি মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান যারা অভিবাসন নিয়ে কাজ করে তাদের দায়িত্ব দিয়েছে দূতাবাস। তাদের মাধ্যমে জীবিত দু'জন এবং মৃতদেহগুলোর তথ্য পাওয়ার চেষ্টা চলছে। তাছাড়া রেডক্রিসেন্টের মাধ্যমেও চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বজনদের মাধ্যমেও দূতাবাস কিছু তথ্য পাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার দূতাবাসের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলা হয়, লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ভূমধ্যসাগরের ব্রেগা তীর থেকে গত দুদিনে বেশ কয়েকজন অভিবাসীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে দূতাবাস বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছে। স্থানীয় উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষের মতে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি নৌকা ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়ার পর এসব মরদেহ ব্রেগা তীরে ভেসে এসেছে। দূতাবাসের ওই ফেসবুক পোস্টে আরও জানানো হয়, উদ্ধার হওয়া মরদেহের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক থাকার আশঙ্কার কথা বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে দূতাবাস এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রাখছে দূতাবাস। 

শনিবার দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এসব মানুষ কোন দেশের নাগরিক তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় রেড ক্রিসেন্টের ধারণা, তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আর যে স্থান থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার হয়েছে সেখানে যাওয়ার অনুমতি এখনো পায়নি দূতাবাস। 

মরদেহগুলো পচেগলে যাচ্ছিল উল্লেখ করে দূতাবাস আরও জানিয়েছে, এসব মরদেহের সঙ্গে জাতীয়তা–সংক্রান্ত কোনো নথিপত্র পাওয়া যায়নি। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় মরদেহগুলো ব্রেগা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে আজদাদিয়া নামক একটি স্থানে সমাহিত করা হয়েছে। 

অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ঢোকার অন্যতম একটি পথ লিবিয়া। এ পথে ইউরোপে যাওয়ার জন্য মূলত ব্যবহার করা হয় ছোট ছোট নৌকা। এসব নৌকায় ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হয়। প্রতিবছর এ পথে যাত্রা করতে গিয়ে প্রাণ হারান অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশী।

ইত্তেফাক/এনএন