ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলার জুনিয়র ফুটবলারদের নিয়ে অনুশীলন করছেন। অন্যদিকে সাফজয়ী নারী ফুটবলারদের বিদ্রোহ চলছে। এখনো পিটার বাটলারের অপসারণের দাবিতে অটল অবস্থানে রয়েছেন খেলোয়াড়রা। কোচের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ফুটবলারদের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গত বৃহস্পতিবার গঠিত বিশেষ কমিটি পরশু রাতেই কাজ শুরু করেছে। গতকাল সন্ধ্যায় বাফুফে ভবনে পুনরায় সভায় বসেন বিশেষ কমিটির কর্তারা। বোর্ডরুমে পালাক্রমে কিছু খেলোয়াড়কে ডাকা হয় তাদের বক্তব্য শোনার জন্য। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
শুরুতে সিনিয়র ফুটবলারদের সঙ্গে কোচের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। বাফুফের বিভিন্ন সূত্রের দাবি, ব্রিটিশ কোচ পিটার নারী সাফ দলে দায়িত্ব গ্রহণ করে যখন সাফের প্রশিক্ষণ শুরু করেন তখন থেকেই সমস্যার শুরু। অনুশীলন শুরুর কয়েক দিনের মধ্যেই ক্যাম্পের সিনিয়র ফুটবলাররা কোচের প্রতি বিগড়ে যান। তারা কোচের কোচিং পদ্ধতি মেনে নিতে পারছিলেন না। কোচ সাফের খেলোয়াড়দের চিনতেন না। তাদের পারফরম্যান্স জানা ছিল না। কোচ পিটার খেলোয়াড়দেরকে বিভিন্ন পজিশনে খেলাচ্ছিলেন। এটা পছন্দ হচ্ছিল না কয়েকজনের।
এ সব কারণে অধিনায়ক সাবিনা খাতুন দুই-এক জন সিনিয়র ফুটবলারকে সঙ্গে নিয়ে নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরনের কাছে অভিযোগ করেন। কিরণ বিষয়টি বাফুফের তখনকার সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিনকে জানান। সালাহউদ্দিনের কাছে গেলে সাবিনাদের অভিযোগ ধোপে টেকেনি। অনুশীলন মাঠে একজন কোচ যে কোনো ফুটবলারকে যে কোনো পজিশনে পরীক্ষা করতে পারেন। এটা কোচের রীতি।
পিটার সিনিয়র-জুনিয়র মিলিয়ে দল গড়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু এটি সমস্যা তৈরি করে সিনিয়রদের মধ্যে। অসন্তুষ্ট হন ফুটবলাররা। বাফুফের ধারণা ছিল বিষয়টি ওখানেই শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু নেপালে সাফে খেলতে গিয়ে একজন ফুটবলার দাবি করেন সিনিয়রদের নিয়ে সমস্যা তৈরি করছেন কোচ। কোচের অপসারণ চেয়ে ৩০ জানুয়ারি যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, সেখানেও বলা হয়েছে কোচ সিনিয়রদের নিয়ে বৈষম্য সৃষ্টি করেছেন। সিনিয়ররা অন্যায় আচরণের শিকার হচ্ছেন।
বাফুফের সূত্রের দাবি অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, মাসুরা পারভিন, নীলা, মাতসুসিমা সুমাইয়া, কৃষ্ণা রানী সরকার এবং সানজিদা আক্তারের নাম বাফুফেকে জানিয়েছিলেন পিটার। তারা একজোট হয়ে অন্যদেরকে সঙ্গে নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে কৃষ্ণা, সানজিদা ও সাবিনা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি। সভাপতি তাবিথ আউয়ালের কাছে পাঠানো চিঠিতে ১৮ ফুটবলারের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। বাফুফের দাবি সাবিনা সবার শেষে স্বাক্ষর করেছেন, অন্যরা আগে স্বাক্ষর করেছেন। যারা স্বাক্ষর করেননি তারা ক্যাম্পের ভেতরে মানসিক চাপে রয়েছেন।
স্বাক্ষরকারীদের কেউ কেউ তাদেরকে বেইমান বলে ডাকছেন। কোচ সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে থাকা ১৮ ফুটবলারকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে গালমন্দ শুনছেন ফুটবলাররা। ঋতুপর্না চাকমাকে তার ইনস্টাগ্রামে সমালোচনার জবাব দিতে বিশ্রী ভাষা ব্যবহার করেছেন। দ্বিতীয়বার তিনি আরও খারাপ ভাষা লিখেছেন। পরে বাজে অবস্থা দেখে শেষ পর্যন্ত মাপ চাইতে হয়েছে। ঋতুপর্না ভালো ফুটবলার, নিষ্পাপ চেহারা, বয়স কম। কিন্তু যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা ছাপার অযোগ্য।
সাবিনা বলেছিলেন সাফ জয় করেছি, 'নিজেকে প্রমাণ করার কিছু নেই।' এ কথায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাবিনাকে মেসি, রোনালদোর চেয়ে বড় খেলোয়াড় বলা হয়েছে সাবিনাকে। মেসি ৮টা ব্যালন ডি'অর জয় করেও এমন কথা বলেননি নিজেকে প্রমাণ করার কিছু নেই।'
কোচ অপসারণের বিবৃতিতে বলা হয়েছে সাবিনারা লিখেছেন-'সাফে ভারতের বিপক্ষে আমাদের চাপে একাদশ বদলাতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং সিনিয়রসমৃদ্ধ দল নিয়ে ভারতকে হারিয়ে ছিলাম। প্রমাণ করে আমরাই সঠিক ছিলাম। আমরা আগেই জানতাম কোচের বিরুদ্ধে এরকম বিদ্রোহ করে একাদশ তৈরি হয়েছিল। আমরা যদি ব্যর্থ হয়.... ভিলেন হয়ে যাব।' দল যদি ব্যর্থ হয় সবার আগে কোচের চাকির যায়, খেলোয়াড়রা ঠিকই মাঠেই থাকেন।