অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় নৌকাডুবিতে নিহত ২৩ জনের মধ্যে ১২ জনের পরিচয় মিলেছে। তাদের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায়।
সোমবার (৩ জানুয়ারি) সকালে মৃত্যুর খবরে তাদের পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
এদের মধ্যে মাদারীপুরের রাজৈরের ১০ জনের পরিচয় নিশ্চিত করেছে উপজেলা প্রশাসন। বাকি দুইজন মুকসুদপুর উপজেলার বাসিন্দা। স্থানীয় ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাদের পরিচয়ও নিশ্চিত হওয়া গেছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা নিহতদের পরিচয় হলো, রাজৈর উপজেলার পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের টিটু হাওলাদার, গোবিন্দপুরের বাসিন্দা আবুল বাশার আকন, সুন্দিকুড়ি গ্রামের নীল রতন বাড়ৈ, সাগর বাড়ৈ, একই গ্রামের মহেন্দ্র নাথ সাগর বিশ্বাস, গোবিন্দপুরের ইনসান শেখ ও আশিষ কীর্তনীয়া, বৌলগ্রামের অমল কীত্তনীয়া, একই গ্রামের অনুপ সরদার, শাখারপাড়র গ্রামের সজিব মোল্লা, সাতবাড়িয়ার রাজীব।
তাছাড়া নিহতদের মধ্যে মুকসুদপুর উপজেলার চরপ্রসন্নদী গ্রামের মেহেদী শেখের ছেলে আশিক শেখ ও একই গ্রামের ওহাব খন্দকারের ছেলে সত্তার খন্দকারও রয়েছেন বলে তাদের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহতদের সবার বয়স ২০—৩০ বছরের মধ্যে।
নিহত আবুল বাশারের বাবা আক্কাস আলী আকন বলেন, মনির হাওলাদার ও স্বপন মজুমদার এই দুই দালাল ২৮ লাখ নিয়েছে আমার ছেলেকে ইতালি পাঠানোর কথা বলে। আমার ছেলের এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। এই দালালদের কঠোর বিচার চাই।
নিহত সত্তার খন্দকারের ভাই আবুল খায়ের জানান, ইতালি যাওয়ার জন্য অনেক ধার দেনা করে দালাল শহিদ মোল্লাকে ১৬ লাখ টাকা দিয়েছি । কিন্তু আমার ভাইকে এভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিবে তা কখও ভাবিনি। আমি এই দালালের বিচার চাই ।
মাদারীপুরের রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ খান বলেন, ইতালি যাওয়ার সময় লিবিয়ায় রাজৈর উপজেলার ১০ যুবক মারা গেছে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। লিখিত অভিযোগ পেলে দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহ মোহাম্মদ সজীব বলেন, নিহত ১০ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ বিষয়ে দূতাবাসের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দূতাবাসের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলা হয়, লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ভূমধ্যসাগরের ব্রেগা তীর থেকে গত দুদিনে বেশ কয়েকজন অভিবাসীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে দূতাবাস বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছে। স্থানীয় উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষের মতে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি নৌকা ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়ার পর এসব মরদেহ ব্রেগা তীরে ভেসে এসেছে। দূতাবাসের ওই ফেসবুক পোস্টে আরও জানানো হয়, উদ্ধার হওয়া মরদেহের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক থাকার আশঙ্কার কথা বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রাখছে দূতাবাস।