আওয়ামী লীগের নির্বচনী প্রচারণামূলক গান বাজানোর ঘটনাকে কেন্দ্রে করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে আজমাঈন হাসান মাঈনের নামের এক শিক্ষার্থীকে দুইবার বহিষ্কার ও শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিক্ষোভও করেছেন বাকৃবির শাহজালাল হলের শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণামূলক গান বাজানোর ঘটনা তদন্তের পর এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গান বাজানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ওই শিক্ষার্থীকে দুই সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়। পরে আপিল ছাড়াই সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। প্রত্যাহারের একদিন না যেতেই ওই শিক্ষার্থীকে আবারও হল থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে প্রশাসনের এমন নাটকীয় ঘটনায় ওই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আজমাঈন হাসান মাঈন দাবি করেন, ঘটনার দিন শাহজালাল হলের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠান চলছিল। গানগুলোও ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীরাই বাজিয়েছিলেন। তিনি শুধু পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। গান বাজানোর সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা না থাকার পরেও হল প্রভোস্ট ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে তাকে হেনস্থা করার জন্য এ শাস্তি দিয়েছেন।
তবে ব্যক্তিগত আক্রোশের বিষয়টি অস্বীকার করে শাহজালাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদিউজ্জামান খান বলেন, 'ওই শিক্ষার্থী যখন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণার ওই গানটি বাজাচ্ছিলেন তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাকে প্রথমে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। পরে ওই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শাস্তি কিছুটা কমিয়ে তাকে হল থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
তাছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১ম বর্ষের প্রায় ৪০জন শিক্ষার্থীকে ৫০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদিউজ্জামান খান।
শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শাখার অ্যাডিশনাল রেজিস্ট্রার মো. সারওয়ার জাহান বলেন, 'এখানে প্রশাসনিক কিছু ত্রুটি ছিলো। হলভিত্তিক সমস্যায় প্রাধ্যক্ষই সব কিছু নির্ধারণ করেন। এ কারণেই প্রথমে শিক্ষার্থীকে একাডেমিক বহিষ্কার করা হলেও পরে সেটি বাতিল করা হয়েছে। হল প্রভোস্ট পরবর্তীতে তার বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছেন।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক নথিপত্র যাচাই করে জানা গেছে,তদন্তের পরে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীকে গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের 'শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা বিধি' অনুযায়ী শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দুই সেমিস্টারের (১২ মাস) জন্য বহিষ্কার করা হয়। পরে গতকাল ৫ ফেব্রুয়ারি শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর কোনো আনুষ্ঠানিক আবেদন ছাড়াই এই শাস্তির আদেশ বাতিল করে নোটিশ জারি করা হয়। সবশেষ ৬ ফেব্রুয়ারি ওই শিক্ষার্থীকে হল থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারাদেশ জারি করা হয়।
হল থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি জানাজানি হতেই তা প্রত্যাহারের দাবিতে ৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বিক্ষোভ করেন শাহজালাল হলের শিক্ষার্থীরা।
এর আগে ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বাকৃবির শাহজালাল হলে ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণামূলক গান ‘জিতবে এবার নৌকা’ এবং ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’- গান দুটি বাজানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। অস্থিরতার মুখে তদন্তে নামে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে শুরু থেকেই শিক্ষার্থীরা দাবি করে আসছেন প্রচারণা নয়, ব্যঙ্গ করেই বাজানো হয় এ গান।
