শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

ক্যারিয়ার গঠনে সোশ্যাল মিডিয়া সহায়ক! 

আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:০২

এখনকার সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া শুধু সময় কাটানো বা বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি ক্যারিয়ার গঠনের জন্যও কার্যকর প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল আপনার পেশাগত পরিচিতি তৈরিতে, নেটওয়ার্কিংয়ে বা আপনার স্কিলসেট অন্যদের সামনে তুলে ধরতে ভূমিকা রাখে, যা ক্যারিয়ারের জন্যও নতুন সুযোগ এনে দিতে পারে।

আজকাল শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নির্ভর করেও অনেকে আয়-রোজগার করছেন, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে তৈরি করছেন নিত্যনতুন নানা কন্টেন্ট; তবে যারা করপোরেট সেক্টরে বা এন্ট্রাপ্রেনারশিপে ভালো করতে চান, তারাও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে লাভবান হচ্ছেন। এখানে সোশ্যাল সাইট বলতে ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের মতো কিছুটা ক্যাজুয়াল এনভায়রনমেন্টের কথা বলছি না, এর ভেতর লিংকডইন-সহ আরো অনেক প্ল্যাটফর্মকে আপনার বিবেচনায় রাখতে হবে।

বিশেষ করে লিংকডইন একটি প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিংয়ের ওয়েবসাইট। এতে সাধারণ সোশ্যাল মিডিয়ার মতো যোগাযোগ বা আলাপ যেমন করা যায়, তেমনি পেশাগত দক্ষতা, কাজের ধরন, অভিজ্ঞতা, অর্জন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা কিছু তুলে ধরা যায় অনায়াসে। বলতে পারেন, এটি হয়ে উঠবে আপনার লাইভ সিভি, যা একনজরে দেখে যে কেউ আপনার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাবেন।

কেবল চাকরির প্রতিযোগিতার সময়ই যে এ ধরনের প্রোফাইল তৈরি করতে হবে, তা নয়। বরং আপনি আপনার শিক্ষাজীবন থেকেই লিংকডইন প্রোফাইল চালু করতে পারেন। সেখানে বিভিন্ন এক্সট্রা-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ, অ্যাওয়ার্ড, ছবি বা তথ্য নিয়মিত শেয়ার করতে পারেন। এতে ধীরে ধীরে প্রোফাইলসমৃদ্ধ হতে থাকবে। সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মোটা দাগে কী কী করা যায়, তার কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করছি:

১. সেলফ ব্র্যান্ডিং বা প্রফেশনাল ইমেজ তৈরি
আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল-বিশেষ করে LinkedIn, Twitter (X), Facebook, এবং Instagram ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রফেশনাল কন্টেন্ট শেয়ার করে ও নিজের দক্ষতা তুলে ধরে আপনি নিজেকে যেকোনো বিষয়ের ওপর এক্সপার্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।

২. প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং, চাকরির সুযোগ বা রিক্রুটারের নজরে আসা
ধরে নিলাম আপনি ইতিমধ্যেই কোনো একটি সেক্টরে কাজ করছেন এবং বেশ দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়া আপনাকে একই ইন্ডাস্ট্রির লিডারদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে। LinkedIn I //Twitter-এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হতে পারে, যা যেকোনো মুহূর্তে আপনাকে এনে দিতে পারে ক্যারিয়ার বুস্ট! তাছাড়া বিভিন্ন নিয়োগকর্তা এবং কোম্পানি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে উপযুক্ত কর্মী খোঁজেন। LinkedIn-এর Jobs সেকশন বা ফেসবুকে বিভিন্ন চাকরির গ্রুপ থেকেও চাকরির বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়। পাশাপাশি, হ্যাশট্যাগ ও প্রাসঙ্গিক পোস্ট ব্যবহার করে নিজেকে চাকরিদাতাদের সামনে তুলে ধরা যায়।

৩. দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ
সোশ্যাল মিডিয়ায় YouTube, LinkedIn Learning, Coursera এবং Facebook Communities-এর মাধ্যমে নতুন স্কিল ডেভেলপ করা যায়। অনেক এক্সপার্ট তাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান ব্লগ আকারে শেয়ার করেন, যা থেকে নতুন কিছু শিখতে পারবেন।

৪. পোর্টফোলিও
যারা স্থপতি, শিল্পী, ইন্টেরিয়র ডিজাইনার, গ্রাফিক ডিজাইনার, লেখক বা ফটোগ্রাফার, তাদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া একটি শক্তিশালী পোর্টফোলিও প্ল্যাটফর্ম। সেখানে নিজেদের কাজ প্রদর্শন করে ক্লায়েন্টদের আকৃষ্ট করা যায়। সোশ্যাল মিডিয়া ফ্রিল্যান্সার এবং উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ তৈরি করে। ফ্রিল্যান্স প্রজেক্ট খোঁজা ও ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে এটি ভূমিকা রাখে।

৫. ইন্ডাস্ট্রি ট্রেন্ড জানা ও আপডেট থাকা
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আপনি নিজের ইন্ডাস্ট্রির ইদানীংকালের ট্রেন্ড, রিসার্চ এবং মার্কেট ডিমান্ড সম্পর্কে নিজেকে আপডেটেড রাখতে পারবেন। Twitter/X Ges LinkedIn-এ প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের প্রোফাইল অনুসরণ করলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জানা যায়।

প্রফেশনাল প্রোফাইল তৈরির জন্য কিছু টিপস

ছবি, বায়োডাটা এবং কাজের অভিজ্ঞতা যথাযথভাবে হালনাগাদ রাখুন। প্রোফাইল পিকচারটি কিছুটা ফরমাল বা সেমি-ক্যাজুয়াল হলে ভালো। একটা ভালো বা ‘ডিসেন্ট’ ছবিই আপনার ইম্প্রেশন তৈরি করবে। এরপর ‘About’ সেকশনটি অল্পকথায় এমনভাবে সাজান, যেখানে আপনার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সহজে পাওয়া যাবে। নিজের ক্যারিয়ার গোলও সেখানে উল্লেখ করতে পারেন। নিজের আগ্রহ বা কর্মক্ষেত্র সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক পোস্ট করুন, নিজের কাজের তথ্য ও ছবি শেয়ার করুন। পোস্টে প্রফেশনাল টোন বজায় রাখুন। এছাড়া বিভিন্ন এক্সপার্ট বা লিডারদের সঙ্গে যুক্ত হন, তাদের প্রোফাইল ফলো করুন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়ই বিভিন্ন সিপিডি (কন্টিনিউয়িং প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট) কোর্সের বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়, সেসব কোর্সও করতে পারেন। এছাড়া কোনো স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্সে অংশ নিয়ে সার্টিফিকেট পেলে সেই সার্টিফিকেশনটিও সোশ্যাল প্রোফাইলে শেয়ার করতে পারেন। এতে অন্যরা আপনার দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা পাবেন। এছাড়া লিংকডইনে অন্যদের রেকোমেন্ডেশনও সংগ্রহ করতে পারেন, যা আপনার ব্যাপারে বিশ্বাসযোগ্যতা বা নির্ভরতা বাড়াবে।

ইত্তেফাক/এসএএস
 
unib