শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৪ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার অন্তরায়:

আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:৫৭

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে দেয়া কিছু প্রস্তাব স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্তরায় বলে মনে করছে নিম্ন আদালতের বিচারকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন। তারা বলছেন, বিচার বিভাগের পৃথককরণ ও স্বাধীনতা পরিপন্থী যেকোনো কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সাংঘর্ষিক ও বিতর্কিত প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে অ্যাসোসিয়েশন।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানান।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "জেলা কমিশনারকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সিআর মামলা প্রকৃতির অভিযোগগুলো গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করা হলো। তিনি অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য উপজেলার কোনো কর্মকর্তাকে বা সমাজের স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মাধ্যমে সালিশি বা তদন্ত করার নির্দেশ দিতে পারবেন। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হলে থানাকে মামলা গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারবেন। পরবর্তীতে মামলাটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় আদালতে চলে যাবে। এর ফলে সাধারণ নাগরিকরা সহজে মামলা করার সুযোগ পাবেন। অপরদিকে, সমাজের ছোটোখাটো বিরোধ আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি হয়ে গেলে আদালতের উপর অযৌক্তিক মামলার চাপ কমে যাবে।"

এ প্রসঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের উপরিউক্ত প্রস্তাব সাংবিধানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় স্পষ্টত হস্তক্ষেপ, আধুনিক জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রচেতনার পরিপন্থী, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নীতি বিরুদ্ধ এবং বিখ্যাত মাসদার হোসেন মামলার রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ সংবিধান রাষ্ট্রের সার্বভৌম বিচারিক ক্ষমতা বিচার বিভাগের ওপর অর্পণ করেছে। রাষ্ট্র ব্যবস্থার আধুনিকায়নের অন্যতম অনুষঙ্গ ক্ষমতার পৃথককরণ এবং স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা। অপরাধ আমলে গ্রহণ একটি বিচারিক কাজ যা কোনোভাবেই নির্বাহী বিভাগের কাছে থাকা সমীচীন নয়; ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের এরূপ প্রস্তাবনা চূড়ান্তভাবে মীমাংসিত একটি বিষয়কে নতুনভাবে বিতর্কিত করেছে। বৈপ্লবিক পট পরিবর্তনের পর বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার নিমিত্ত যখন বিভিন্ন পদক্ষেপ চলমান তখন 'জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন'-এর এরূপ প্রস্তাব নিশ্চিতভাবে জন-আকাঙ্খার প্রতিফলনে বাধা সৃষ্টি করবে।

অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, বেশিরভাগ সংস্কার কমিশন তাদের সংস্কার প্রস্তাবসমূহ প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট জমা দিয়েছেন। জনবান্ধব বিচার বিভাগ গড়ে তুলতে 'বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন' যে সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট জমা দিয়েছে তা ইতোমধ্যেই জনমনে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। 

অন্যদিকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এমন কিছু প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যা স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্তরায়।

কারণ বাংলাদেশে স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার যাত্রাটি ছিল অনেক কণ্টকাকীর্ণ; সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথককরণ হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা এখনও অর্জিত হয়নি। তাই বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি
 
unib