শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

জাসদের গুঁড়িয়ে দেওয়া কার্যালয়ের জায়গায় এক দিনে তিন সাইনবোর্ড

আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:৩৪

বগুড়া শহরের সাতমাথায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) গুঁড়িয়ে দেওয়া কার্যালয়ের জায়গার মালিকানা নিয়ে একটি পরিবার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা সাইনবোর্ড লাগানোর পর সেখানে সরকারি গেজেটভুক্ত পরিত্যক্ত ও অর্পিত সম্পত্তির সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে জেলা প্রশাসন।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে, বিকেলে ও সন্ধ্যায় তিনবার এ সাইনবোর্ডগুলো টাঙানো হয়।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার রাতে শহরের সাত মাথায় জাসদ, আওয়ামী লীগ, সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়ন, টাউন ক্লাব ছাড়াও কিছু কার্যালয় এক্সকাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে জাসদের কার্যালয় থাকা জায়গার মালিকানা নিয়ে শনিবার বিভিন্ন পক্ষ থেকে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়।

জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শহরের সূত্রাপুর মৌজার ৪৬৮ সিএস খতিয়ানভুক্ত ১৫৮০ নম্বর দাগে ১৩ দশমিক ২৫ শতক সম্পত্তি সরকারের গেজেটভুক্ত পরিত্যক্ত ও অর্পিত সম্পত্তি। ওই ১৩ শতকের মধ্যে ৬ দশমিক ১৪ শতকে জেলা জাসদ এবং ৩ দশমিক ৭ শতাংশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয় ছিল।

বৃহস্পতিবার রাতে জাসদের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর শনিবার সকালে জমির মালিকানা দাবি করে সেখানে ডিজিটাল ব্যানার বা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয় শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকার ব্যবসায়ী আবদুর রহমানের পরিবার। পরে বিকেলে সমাবেশ করে ওই সাইনবোর্ড খুলে সেখানে ‘শহীদদের স্মরণে মসজিদ নির্মাণের নির্ধারিত স্থান’ ব্যানার টাঙান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। সন্ধ্যায় সেই ব্যানার খুলে সেখানে জমির বিবরণ দিয়ে সাইনবোর্ড লাগায় জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা ভবন ভেঙে যে জায়গা খালি করেছে, সেটি সরকারি গেজেটভুক্ত পরিত্যক্ত ও অর্পিত সম্পত্তি। মালিকানা দাবি করে কতিপয় ব্যক্তি দখলের চেষ্টা করায় সেটি দখলমুক্ত করে সরকারি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

ভূমি আপিল বোর্ডের মামলার রায় ও জেলা প্রশাসনের নথি সূত্রে জানা গেছে, ওই জমির সিএস রেকর্ডীয় মালিক ছিলেন চেলোপাড়ার সুধীর চন্দ্র দাস, সুনীল চন্দ্র দাস ও সুশীল চন্দ্র দাস। ১৯৪৭ সালে তাঁরা সপরিবার দেশ ত্যাগ করেন। ওই সম্পত্তির ৬ দশমিক ১৪ শতকে স্থাপনা তুলে কার্যালয় করে অবিভক্ত ছাত্রলীগ। ১৯৭২ সালে জাসদ গঠনের পর সরকারের থেকে ইজারা নিয়ে সেটি জেলা জাসদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সরকারের আমলে সেই ইজারা নবায়ন করা হয়নি। ওই জমি মোটর মালিক সমিতির থেকে কিনেছেন বলে দাবি করেন শহরের একসময়ের পরিবহন ব্যবসায়ী আবদুর রহমান শেখ ও তিন ব্যক্তি। ওই সম্পত্তি আবদুর রহমান শেখের নামে খারিজ খতিয়ান খোলা হলেও তাঁর দখলে ছিল না।

নথিপত্র থেকে জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে ওই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে মোটর মালিক গ্রুপকে বিবাদী করে আদালতে মোকদ্দমা করেন আবদুর রহমান শেখের ছেলে আবদুর রহিম। আদালত ১৯৯৪ সালের ১২ নভেম্বর মোকদ্দমাটি খারিজ করে দেন। ২০০৭ সালে সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সম্পত্তির নথিপত্র যাচাই শেষে মিস কেস মূলে খাস ঘোষণার উদ্যোগ নেন তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুনীর চৌধুরী। ২০০৯ সালের ৩১ মার্চ এক আদেশে সম্পত্তি খাস ঘোষণার জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেন। ওই আদেশের আপিলের পর ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি আপিল আবেদন নামঞ্জুর হয়। পরে ভূমি আপিল বোর্ডে আপিল করলেও আবেদন নামঞ্জুর হয়। এরপর বিবাদীপক্ষগুলো ভূমি আপিল বোর্ডের ফুল বোর্ড আদালতে আবেদন করলে শুনানি শেষে ২০২৪ সালের ২৬ মে সেটিও খারিজ হয়ে যায়।

ইত্তেফাক/এমএএস
 
unib