সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় আইনের তোয়াক্কা না করে শত শত বিঘা তিন ফসলি জমি কেটে পুকুর খনন করা হচ্ছে। বিশেষ করে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র পুকুর খনন করায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ব্রিজ ও কালভার্টের মুখ। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা।
সরজমিনে দেখা গেছে, হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহা সড়কের খালকুলা ও মহিষলুটী এলাকায় মহাসড়কের গা ঘেঁষে ২৫ থেকে ৩০ বিঘা আয়তনের বেশ কয়েকটি পুকুর খনন করা হচ্ছে ভেকু মেশিন দিয়ে। সেখানে দুইটি পুকুর খনন করা হচ্ছে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহা সড়কের বুনা মারা নামে একটি কালভার্টের তিনটি মুখ বন্ধ করে। মহিষলুটীর দক্ষিণ-পশ্চিম মাঠেও পুকুর খনন করা হচ্ছে। ভায়াট গ্রামে খালকুলা সড়কের মসজিদের পশ্চিমে খালকুলা সড়কের সঙ্গে বড়-বড় বেশ কয়েকটি পুকুর খনন চলছে। তাড়াশ সদর ইউনিয়নের কাউরাইল গ্রাম ও সোলাপাড়া গ্রামের মাঠেও পুকুর খনন চলছে। এছাড়া চৌপাকিয়া, ভাটরা, খোলাবাড়িয়াসহ পুরো উপজেলার আরো বেশ কিছু গ্রাম এলাকাতে আবাদযোগ্য উর্বর জমি কেটে অবৈধ পুকুর খনন করা হচ্ছে।
নওগাঁ ইউনিয়নের মাটিয়া মালিপাড়া গ্রামের কৃষক আরবান আলী, কেতাব আলী ও বাঁশবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ, রহমান আলী, মোজদার হোসেন বলেন, হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের উত্তরে বড় বিল, দক্ষিণে ছোট বিল। মূলত বিলের বিস্তীর্ণ মাঠের জমিতে বছরে তিন বার ফসলের আবাদ হয়। বোরো ধান, রোপা আমন ও সরিষা। এ বছর বিলের মাঠে যে পরিমাণ অবৈধ পুকুর খনন করা হচ্ছে, অন্য জমিগুলো নিশ্চিত জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে থাকবে। বিশেষ করে মহা সড়কের বুনা মারা তিনমুখো কালভার্ট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। বিলের উজানের পানি ভাটি অঞ্চলে নামার কোন সুযোগ থাকবে না।
উপজেলা নাগরিক আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রাজু জানান, সাধারণ কৃষক পুকুর খননে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছেন। পুকুর খননের সময় ভেকু মেশিন পুড়িয়ে দিয়েছেন তারা। আইনের যথাযথ প্রয়োগ ছাড়া পুকুর অবৈধ খনন বন্ধ করা সম্ভব নয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পুকুর বাড়ছে। এক দশকে কৃষি জমি কমেছে ১৪ হাজার ৯৪০ বিঘা। এখনো প্রায় ৭ হাজার বিঘা জমি জলাবদ্ধ। ধান উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে।
তাড়াশ থানার ওসি মো. আসলাম হোসেন বলেন, ‘আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অবৈধ পুকুর খনন করার অপরাধে নিয়মিত মামলা হয়েছে ছয়টি। আসামি ৩৫ জন।' উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুইচিং মং মারমা বলেন, 'রাতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। তেমন কিছু করতে পারছি না। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে মাইকিং করা হচ্ছে।’
জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘তাড়াশের সব শ্রেণি-পেশার লোকজনের সঙ্গে আমার মতবিনিময় হয়েছে। আমি উপজেলা প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে বলেছি, যেন তাড়াশে কেউ পুকুর খনন করতে না পারেন। তার পরও পুকুর খনন চলছে, বিষয়টি দেখছি।’
এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) খোন্দকার আজিম আহমেদ এনডিসিকে অবহিত করা হলে তিনি দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, ‘ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’