বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি দীর্ঘ সময় নিলেও দোষীদের শাস্তির বিষয়ে প্রশাসন কোনো স্পষ্ট সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেনি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তদন্তের নামে সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে, অথচ সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গত বছরের ২৪ নভেম্বর রাত আনুমানিক ১০টার পর থেকে শুরু হওয়া বুটেক্স-পলিটেকনিক সংঘর্ষ টানা ৪ ঘণ্টা ধরে চলে, যা ভোর ৩-৪টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এতে বহু শিক্ষার্থী আহত হন এবং বুটেক্সের ৪৮তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ব্যার্থ হলে পরবর্তীতে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করে এবং তারাও ব্যার্থ হয়ে স্থান ত্যাগ করে। পরবর্তীতে কয়েক দফা সংঘর্ষের পর এক পর্যায়ে সংঘর্ষ থেমে যায়।
পরদিন ২৫ নভেম্বর বুটেক্স প্রশাসন জরুরি সভা করে সাতটি কমিটি গঠন করে, যার মধ্যে একটি ছিল তদন্ত কমিটি। প্রথমে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও ৪ ডিসেম্বর জানা যায়, কমিটি আরও সাত কর্মদিবস সময় নিয়েছে। এরপরও তদন্ত প্রতিবেদন দেরিতে জমা পড়ে, এবং দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীরা কোনো অগ্রগতির খবর পাননি।
সংঘর্ষের পর থেকেই দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একে অপরকে দায়ী করে মিডিয়ায় বক্তব্য দিতে থাকেন এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সঠিক অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানান।
তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও দুই মাস পার হয়ে গেলেও কোনো দৃশ্যমান শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তদন্তের নামে শুধু সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে, কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ এখনো দেখা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে বর্তমান প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে ৪ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই ঘটনার সময় যেহেতু আমি প্রক্টর ছিলাম না, তাই ঘটনার অগ্রগতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। তবে আমার জানামতে এটা প্রক্রিয়াধীন আছে।
উল্লেখ্য, ২৪ নভেম্বর সংঘর্ষের পর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জানুয়ারির শুরুতে ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়। এরপর ৮ জানুয়ারি ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়, পলিটেকনিকের জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তাদের প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠানো হবে (সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে)। আর বুটেক্সের দুইজন অভিযুক্ত প্রাক্তন শিক্ষার্থীর নাম এসেছে , তবে প্রাক্তন হওয়ায় সরাসরি আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া জটিল, তবে তাদের সার্টিফিকেট বাতিলের মতো ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
প্রশাসনের এই ধীরগতির সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রায় দুই মাস হয়ে গেল, এখনো জানতে পারলাম না, দোষীদের কী শাস্তি হলো। প্রশাসন শুধু সময় নিচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে কিছু হচ্ছে না।’
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ভিসি স্যার, ডিসিপ্লিনারি কমিটি, সিন্ডিকেট—সবাই একে অপরের ওপর দায় দিচ্ছে। তাহলে আমাদের জানাবে কে? এটা কি তাহলে ধামাচাপা পড়ে যাবে?’
শিক্ষার্থীরা দ্রুত সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্রকাশ এবং তদন্তের ফলাফল বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়া হয়নি।
ডিসিপ্লিনারি কমিটির এক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের কাজ ছিল তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া। সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হলে সেটি সিন্ডিকেটে তুলতে হবে, যা প্রশাসনের দায়িত্ব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, উপাচার্যের অনুমতিক্রমে রেজিস্ট্রার সিন্ডিকেটে বিষয়টি উপস্থাপন করবেন। কিন্তু আদৌ এটি সিন্ডিকেটে তোলা হয়েছে কি না, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
বুটেক্সের বর্তমান রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. রাশেদা বেগম দিনা ৯ ফেব্রুয়ারি (রোববার) জানান, ‘পলিটেকনিকের জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে তাদের প্রশাসন বরাবর কোনো চিঠি পাঠানো হয়েছে কি না বা বিষয়টি সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করা হয়েছে কি না, তা আমি নিশ্চিত নই। পাশাপাশি, বুটেক্সের সংশ্লিষ্ট দুইজনের ব্যাপারেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, সে বিষয়েও আমার জানা নেই। তবে এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া, এবং ভিসি স্যার নিজেই বিষয়টি দেখছেন।’
তিনি আরও জানান, শিগগির হয়তো পলিটেকনিক ইস্যুটি সিন্ডিকেটে তোলা হবে।
তবে তিনি আশ্বাস দেন যে, ভিসি স্যারের কাছে সংশ্লিষ্ট ফাইল রয়েছে, তিনি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন, তবে আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এটি দীর্ঘায়িত হচ্ছে।