বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

চাঁদপুরে ১৩ দিনের মাথায় দুই ভাইয়ের মৃত্যু, কবর পাশাপাশি

আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩২

মাত্র কদিন আগের কথা। চাঁদপুরের একটি আবাসিক হোটেলের রুম থেকে উদ্ধার হয়েছিল ২৭ বছরের টগবগে তরুণ রুবেল সর্দারের মরদেহ। সেই শোক না কাটতেই ১৩ দিনের মাথায় না ফেরা দেশে পাড়ি জমিয়েছেন তার বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম সর্দার (৫৫)।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে অসুস্থ হয়ে মারা যান জাহাঙ্গীর।  এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুরের একটি হোটেলের রুম থেকে রুবেলের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। অল্প দিনের ব্যবধানে দুই ভাইয়ের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। ৬ ভাই ১ বোনের সংসারে জাহাঙ্গীর আলম সরার বড় আর রুবেল ছোট। রুবেল এখনও বিয়ে করেনি। দুই ভাইকে পাশাপাশি কবর করা হয়।

পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রুবেল স্নাতকোত্তর শেষ করার পর একটি ওষুধ কোম্পানিতে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি নেন। তার কর্মস্থল ছিল নোয়াখালী জেলা সদরে। চাকরির পাশাপাশি তিনি উচ্চশিক্ষা নেওয়ার জন্য মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা ছিল তার। এর মধ্যে ১ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে নোয়াখালীর কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশে বের হন রুবেল। সেখানে না গিয়ে ওই দিন এক বন্ধুসহ চাঁদপুর শহরের বিপণিবাগ এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন। ২ ফেব্রুয়ারি সকালে ওই হোটেলের এক কর্মচারী রুবেলের কক্ষের দরজা খোলা পান। ভেতরে গিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ দেখতে পান। তবে ওই বন্ধু সেখানে আর ছিলেন না। পরে চাঁদপুর মডেল থানা-পুলিশ সেখান থেকে রুবেলের মরদেহ উদ্ধার করে।

রুবেল সর্দারের ভাই চান মিয়া দাবি করেন, রুবেলকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছেন বন্ধুরা। এ বিষয়ে চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহার মিয়া বলেন, রুবেলের মৃত্যুর ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। ঘটনাটির আপাতত তদন্ত চলছে। রুবেলের সঙ্গে থাকা ওই ব্যক্তিকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এদিকে রুবেলের মৃত্যুর পর থেকেই খুব ভেঙে পড়েছিলেন তার বড় ভাই জাহাঙ্গীর। প্রায় তিনি রুবেলের জন্য প্রলাপ করতেন। সবশেষ বৃহস্পতিবার অসুস্থ হয়ে পড়েন জাহাঙ্গীর। এর কিছু সময় পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবারটি বলছে, ছোট ভাই রুবেলের এমন মৃত্যুর শোক সইতে না পেরেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন বড় ভাই জাহাঙ্গীর।

পরিবারের দুই সদস্যের পর পর মৃত্যুতে গোটা পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। রুবেল ও জাহাঙ্গীরের মা ভুলু আক্তার বলেন, ‘১৩ দিনের মাথায় আমার দুইটা বুকের ধন চইলা গেল। আমি অনে বাঁচুম ক্যামনে? দুই পোলার মরণ আমার সব শেষ কইরা দিল। তাগো আগে আমি মরলাম না কেন?’

মতলব উত্তর থানার ওসি মো. রবিউল হক জানান, অল্প দিনের ব্যবধানে এক পরিবারের দুই সদস্যের মৃত্যুর খবরটি তিনি জেনেছেন। এ ঘটনায়  থানায় কোনো মামলা বা অভিযোগ হয়নি।

ইত্তেফাক/এপি
 
unib