শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

চাকরি বদলের সঠিক সময় ও কৌশল

আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:৩৩

সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সুবিধা হলো, একবার যদি পছন্দের চাকরিটা পেয়ে যান তবে বাকি জীবন মোটামুটি নিশ্চিন্তেই চাকরি করতে পারবেন। যেমন ক্যাডার সার্ভিস বা অন্যান্য প্রথম শ্রেণির চাকরিতে নির্দিষ্ট সময় পরপর বদলি বা পদোন্নতি হবে, কাজের ধরন বা ক্ষেত্র বদলাবে, নতুনত্ব আসবে। ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলে কাজের পরিধি এবং সুযোগ-সুবিধাও বিস্তৃত হতে থাকবে। আপনার দায়িত্ব শুধু কাজ করে যাওয়া। বিনিময়ে পাবেন সামাজিক মর্যাদা ও আর্থিক নিরাপত্তা।

তবে কর্পোরেট সেক্টরের চাকরির ধরন এর চেয়ে অনেক বেশি আলাদা বলা চলে। আপনি কোন পথে হাঁটবেন, ক্যারিয়ারে কীভাবে সামনের দিকে এগোবেন, বেতন বাড়বে কিনা কিংবা প্রতিষ্ঠান আপনাকে কতটা মূল্যায়ন করবে-সবকিছুই নির্ভর করবে আপনার নিজের ওপর। আর প্রতিটা পদে পদে নানারকম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, পারফরম্যান্স ভালো না হলে চাকরিও হুমকিতে পড়তে পারে, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ভালো না হলে আর্থিক টানাপোড়েন আসাও অস্বাভাবিক নয়; এই সবকিছু পাড়ি দিয়েই কর্পোরেট সেক্টরের সিঁড়ি ভাঙতে হয়। এই যাত্রার একটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো চাকরি বদল।

চাকরি বদলের সঠিক সময় কোনটি, কী কী কৌশল অবলম্বন করতে হবে, তা নিয়েই এই লেখা। ক্যারিয়ার গাইডলাইনের বিভিন্ন বই, ওয়েবসাইট, পডকাস্ট বা ব্লগ থেকে পাওয়া কিছু তথ্য ও পরামর্শের ভিত্তিতে কিছু বিষয় এতে উল্লেখ করছি। এই বিষয়গুলো জানা থাকলে ক্যারিয়ারে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সহজ হবে।

কখন চাকরি বদলানো উচিত
প্রমোশন, ভ্যারিয়েশন বা ইনক্রিমেন্ট না থাকলে একই ধরনের কাজ দীর্ঘদিন ধরে করতে থাকলে শেখার সুযোগ কমে যায়। একঘেয়েমি তো আছেই। তাছাড়া পদোন্নতিও হচ্ছে না? তার মানে প্রতিষ্ঠান আপনাকে শুধু খাটিয়ে নিচ্ছে, মূল্যায়ন করার ব্যাপারে খুব একটা সচেষ্ট নয়। আপনি আপনার বসের সঙ্গে দুই-একবার এ ব্যাপারে কথা বলতে পারেন, যদি ইতিবাচক সাড়া না পান সেক্ষেত্রে বিকল্প চিন্তা শুরু করুন। তাছাড়া বর্তমান চাকরিতে আশানুরূপ বেতন না পেলেও নতুন সুযোগ খোঁজা উচিত। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা কর্মীদের কাছ থেকে সবটুকু আদায় করে, কিন্তু বেতন বৃদ্ধির ব্যাপারে গড়িমসি করে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে বেশি দিন চাকরি করলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়।

কাজের চাপ ও মানসিক চাপ অসহনীয় হলে সরকারি চাকরিতে আপনার ‘বস’ বদল হতে থাকবে। একেক জায়গায় একেক অভিজ্ঞতা হবে। কিন্তু কর্পোরেট সেক্টরে তো সাধারণত একই প্রতিষ্ঠানের ভেতর তেমনটা ঘটে না। ধরুন আপনি একটা কোম্পানির ম্যানেজার। প্রতিষ্ঠানের মালিক নিজেই সিইও, আপনার বস। তিনি আপনাকে অত্যধিক চাপে রেখেছেন। সপ্তাহে সাতদিন যখন-তখন নানা দায়িত্ব চাপাচ্ছেন, পান থেকে চুন খসলেই বকাঝকা করছেন। আপনি নিজের জন্য কোনো সময় বের করতে পারছেন না। একপর্যায়ে অফিস আপনার জন্য ‘টক্সিক’ হয়ে উঠবে, মানসিক চাপ সৃষ্টি করবে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে চাকরি বদলানোর কথা মাথায় আসাই স্বাভাবিক। কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য নষ্ট করা যাবে না।

অন্য কোথাও তুলনামূলক ভালো সুযোগ পেলে: কর্মপরিবেশ, কাজের ধরন, বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ তুলনামূলক ভালো চাকরির অফার পেলে অবশ্যই ভেবে দেখা উচিত। সেখানে হয়তো আপনি নিজেকে নতুনভাবে মেলে ধরতে পারবেন, যা আপনার ক্যারিয়ারে ‘গ্রোথ’ হিসেবে যুক্ত হবে। যদি সেখানে আপনার দক্ষতাকে মূল্যায়ন করা হয় এবং আপনিও দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবার সুযোগ পান, তবে কেন নয়? তবে চাকরির বাজারে যখন তখন ভালো চাকরি পাওয়া যায় না। যে কয়টা ভ্যাকেন্সি তৈরি হয়, সেখানেও ‘ডায়নামিক’ ক্যান্ডিডেটরা জায়গা দখল করে। ফলে নিজেকে ‘ডায়নামিক’ হিসেবে তৈরির জন্য সবসময় চেষ্টা জারি রাখতে হবে।

কিছু কৌশল
বর্তমান চাকরির অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা ঝালিয়ে নিন: কী কী শিখেছেন এবং কীভাবে নতুন জায়গায় তা কাজে লাগাতে পারবেন, তা বুঝতে হবে।

নেটওয়ার্কিং করুন: ইন্ডাস্ট্রির মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন, লিংকডইন ব্যবহার করুন এবং বিভিন্ন কর্পোরেট ইভেন্টে অংশ নিন। সঠিক সময় নির্বাচন করুন: চাকরির বাজারের অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নিন। বছরের শুরুর দিকে নতুন নিয়োগ বেশি হয়।

সঠিক প্রতিষ্ঠান বাছাই করুন: নতুন প্রতিষ্ঠানের কাজের পরিবেশ, বেতন কাঠামো ও আপনার নিজের উন্নতির সুযোগ যাচাই করুন। 

গোপনীয়তা বজায় রাখুন: চাকরি খোঁজা ও ইন্টারভিউয়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন, যেন বর্তমান প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীরা সেটি নেতিবাচকভাবে না নেন।

নিশ্চিত সুযোগ পেলেই তবে সিদ্ধান্ত নিন: নিশ্চিত অফার হাতে না থাকলে চাকরি ছেড়ে দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আগে সব দিক বিবেচনা করুন।

স্মার্ট সিভি ও কভার লেটার তৈরি করুন: সিভি মানে একখণ্ড কাগজে কতগুলো নাম-ঠিকানা নয়। এটি আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রতিফলন।

ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি নিন: ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে রিসার্চ করুন, সাধারণ প্রশ্নের উত্তর প্রস্তুত রাখুন এবং আত্মবিশ্বাসী থাকুন।

চাকরি ছাড়ার সময় করণীয়
প্রতিষ্ঠানের প্রচলিত নিয়ম অনুসরণ করুন: বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেই চাকরি ছাড়ার এক মাস আগে এইচআর-কে জানাতে হয়। সে অনুযায়ী নোটিশ দিন।

সহকর্মীদের কাছে ইতিবাচক ছাপ রেখে যান: পুরোনো সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখুন, ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে। অন্য কোথাও একসঙ্গে কাজের সুযোগ হতে পারে।

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট, রেফারেন্স বা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করুন: এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট, স্যালারি স্টেটমেন্ট ও সুপারভাইজারের রেফারেন্স লেটার সংগ্রহ করুন। এগুলো আপনার ক্যারিয়ারের একেকটা মাইলফলক।

উপরিউক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। আশা করি আপনি অনেকদূর যাবেন।

ইত্তেফাক/এসএএস
 
unib