ছোটবেলায় নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পর পরিবারের ভরণপোষণের জন্য জীবিকার সন্ধানে নামেন। প্রথমে ওষুধ বিক্রির কাজ করলেও পরবর্তীতে পত্রিকা বিলির পেশায় যুক্ত হন। বর্তমানে অটোরিকশায় করে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পত্রিকা বিলি করেন। দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে ১০ মাইল পর্যন্ত তার পত্রিকা বিতরণের রুট।
বলছিলাম দিনাজপুরের রাজবাড়ী এলাকার মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানের কথা। ৭০ বছর বয়সেও একনিষ্ঠভাবে যিনি পত্রিকা বিলির কাজে নিয়োজিত।
মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি )-এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পত্রিকা দিয়ে আসছেন। দীর্ঘ ৪২ বছরের বেশি সময় ধরে এই পেশায় থাকা মান্নান সাহেব তার জীবনের অনেক উত্থান-পতন দেখেছেন। কিন্তু কাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতা কখনো কমেনি।
তবে তার জীবনের পথে সবকিছু সহজ ছিল না। প্রায় তিন বছর আগে পত্রিকা বিলি করতে গিয়ে নসিমনে এক দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। একদিন পত্রিকা দেওয়ার সময় গাড়িতে শিক্ষকরা ওঠার পর ড্রাইভারের পাশে বসেন। চলন্ত অবস্থায় তিনি পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। তিন মাস তাকে ঢাকার একটি মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়।
বর্তমানে প্রিন্ট পত্রিকার চাহিদা কমে যাওয়ায় তার আয় আগের তুলনায় অনেক কম। তিনি বলেন, ‘আগে পত্রিকা বিক্রি করে যা আয় হতো, এখন তার অর্ধেকও হয় না। মানুষ এখন অনলাইন পোর্টালেই খবর পড়ে।’ তবুও পেশার প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা তাকে এই কাজ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করে।
তার ব্যক্তিগত জীবনে রয়েছে দুই মেয়ে, যারা এখন বিবাহিত। জীবনের এই পড়ন্ত বেলায়ও তিনি প্রতিদিন অটোতে করে পত্রিকা বিলির কাজ করেন। তার নিষ্ঠা এবং শ্রম হাবিপ্রবির শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।
শারীরিক অসুস্থতা, অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা এবং প্রযুক্তির প্রতিযোগিতামূলক যুগেও মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান তার পেশার প্রতি অটল থেকেছেন। তার জীবন সংগ্রাম শুধু পেশার গল্প নয়, এটি একজন মানুষের অদম্য জেদ ও শ্রমের অনুপ্রেরণার দলিল।