পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশ। দুই দেশের জন্য কল্যাণকর হয় এমন সম্পর্ক গড়তে আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব। একইসঙ্গে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার বিষয়টি দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ইস্যু হওয়া উচিত নয়। কারণ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে। ওমানের মাস্কাটে ৮ম ভারত মহাসাগর সম্মেলনের ফাঁকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম উইওনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য পারস্পরিক কল্যাণকর হয় এমন ভালো সম্পর্ক জরুরি বলে বাংলাদেশ বিশ্বাস করে আমি মনে করি, ওমানে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আমার ভালো বৈঠক হয়েছে। আমরা দুইজনই একে-অপরের ভাষা বুঝতে পারি। সম্পর্ক উন্নয়নে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা প্রস্তাব করেছি, দুই পক্ষের সম্মতিতে আগামীতে বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠকের আয়োজন করা সম্ভব হলে সেটা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আমাদের দুই দেশের সম্পর্কে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আমরা চাই দুই পক্ষ এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে একে-অন্যের প্রয়োজন বুঝবে এবং সম্পর্কের উন্নয়নে সামনে অগ্রসর হবে।
কোন ধরনের পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে- এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, যেমন কিছু সময়ের জন্য দুই দেশের বাণিজ্য থমকে গিয়েছিল বা হ্রাস পেয়েছিল, কিন্তু এখন বাণিজ্য আবার বেড়েছে এবং বেসরকারি খাত ভালো করছে। আগামী এপ্রিলে অনুষ্ঠেয় বিমসটেক সামিটে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকের সম্ভাবনা আছে কি-না এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিমসটেক সামিটে বেশি নেতারা একত্রিত হন না। সেখানে সাধারণত সব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা একে-অপরের সঙ্গে দেখা করেন। তাই সেখানে দুই নেতার বৈঠকের একটি সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নিপীড়ন নিয়ে ভারতের অভিযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে গত পাঁচ মাসে অনেক অতিরঞ্জিত ও মিথ্যা খবর প্রকাশিত হয়েছে। হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুরা সমানভাবে বাংলাদেশের নাগরিক। তাদের সমান অধিকার রয়েছে, আইনে সমান সুরক্ষা রয়েছে। আমরা আমাদের সংখ্যালঘুদের প্রতি খেয়াল রাখব, ভারত তাদের সংখ্যালঘুদের খেয়াল রাখবে।
সীমান্ত ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সীমান্ত নিয়ে কোনো সমঝোতা পরিবর্তনের বিষয়ে আমি শুনিনি। সীমান্তের ইস্যুটি হচ্ছে- বিএসএফ নিরীহ মানুষদের গুলি করে হত্যা করছে। এটা পৃথিবীর কোনো বন্ধু রাষ্ট্রের সীমান্তে ঘটে না। সীমান্তে অপরাধের কথা বলা হয়, কেউ যদি আইন লঙ্ঘন করে তাকে আটক করা যেতে পারে, আদালতে তার বিচার হতে পারে। কিন্তু মানুষ হত্যা হতে পারে না, এমনকি তারা অপরাধ করলেও নয়। দুই দেশের সীমান্ত বাহিনীর বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা অন্যান্য দেশের মতোই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইছি। বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সম্পর্কের কারণে ভারতের নিরাপত্তায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এই সম্পর্কের কারণে ভারতের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে বলে আমি মনে করি না। আমরা এমন কিছু করব না যাতে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন কিছুদিন হলো ক্ষমতায় এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে অনেক পরিবর্তন আসছে। কি হতে যাচ্ছে সেটা আমরা এখনো জানি না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটা বজায় রাখতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। যদি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিবর্তন আসে, তাহলে আমরা চেষ্টা করব সেটার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা হতে পারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্ররোচনামূলক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া, যিনি এখন ভারতে অবস্থান করছেন। আমি মনে করি, তিনি যতদিন ভারতে আছেন ততদিন চুপ থাকা উচিত। আর ভাঙচুরের ঘটনাটি একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এটা নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশে ভারতীয় প্রকল্পগুলো নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া। আমি মনে করি না কোনোটি স্থগিত হয়েছে।