রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

৩০ বছর ধরে পতাকা বিক্রি করেন আব্দুল কাদির

আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫:৪১

ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ১টা। কটিয়াদী সরকারি কলেজ চত্বরে মেতে ছিলাম চায়ের আড্ডায়। হঠাৎই কানে ভেসে এলো একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’ চোখ তুলে তাকাতেই দৃষ্টিগোচর হলো হেঁটে চলেছেন এক মধ্যবয়সি ব্যক্তি, যার সাইকেলের হাতল ও পেছনের সিটে থরে থরে সাজানো লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা।

লোকটির সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেল, তিনি কটিয়াদী সাবরেজিস্ট্রি অফিসের নৈশপ্রহরি আব্দুল কাদির। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ফেরি করে পতাকা বিক্রি করছেন উপজেলার অলিগলি ও পথে প্রান্তরে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও হাট-বাজারে পতাকা বিক্রি করেন। অন্য অনেক পেশার সুযোগ থাকলেও দেশপ্রেমের টানেই এই পেশাকে বেছে নেওয়া বলে জানান তিনি।

প্রায় ৫০ বছর বয়সি আব্দুল কাদিরের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার কমলপুর গ্রামে। বর্তমানে কটিয়াদী পূর্বপাড়া বসবাস করেন। তার বাড়িতে স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। অভাবের সংসারে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

মহান একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে তিনি পতাকা বিক্রি করতে এসেছেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে সাইকেলে চড়ে পতাকা বিক্রি করছেন। পতাকা কিনতে তার পাশে ভিড় করছেন অনেকেই। তিন ধরনের পতাকা রয়েছে তার কাছে। ছোট পতাকা ১০ টাকা, মাঝারি ধরনের ২০ টাকা আর একটু বড় সাইজের টার দাম ৫০ টাকা।

এছাড়াও রয়েছে জাতীয় পতাকা সংবলিত মাথায় বাঁধার বেল্ট, ছোট হাতের জাতীয় পতাকা, কাগজের পতাকা এবং গালে ও কপালে আটকানো স্টিকার। দেশের প্রতি রয়েছে তার অসীম ভালোবাসা। আর সেই ভালোবাসার জন্যই ব্যবসা খুব একটা ভালো না হলেও শুধু পতাকার রঙে রঞ্জিত লাল-সবুজকেন্দ্রিক পতাকা বিক্রি করে থাকেন তিনি।

আব্দুল কাদির বলেন, চাকরি করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই সকাল ৯-৪টা অফিস করেন আর বাকি সময় পতাকা বিক্রি করেন। এবং ছুটির দিন সারা দিন বিক্রি করে থাকেন।

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘মাঝে মধ্যে অনেক ছোট ছোট ছেলে মেয়ে টাকা ছাড়াই পতাকা নিতে আসে। অনেককেই ফ্রিতে দিই। কিন্তু সংসার চালানোর তাগিদে সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয় না। সরকার যদি আমাকে সহায়তা করে সব শিশুর মধ্যে জাতীয় পতাকা বিতরণ করে স্বাধীনতার চেতনা ছড়িয়ে দিতে পারতাম।’

কটিয়াদী পৌর এলাকার বাসিন্ধা ফজলে রাব্বি, আবুল হাসান, গণি শেখসহ অনেকে জানান, ভাষার মাস, স্বাধীনতা ও বিজয়ের মাস শুরু হলেই জাতীয় পতাকা নিয়ে পথে পথে ঘোরেন আব্দুল কাদের। তিনি দেশের প্রতি ভালোবাসা ও আবেগ থেকে এটি করেন। লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে এমন আবেগ খুব কম মানুষের মধ্যে দেখা যায়।

ইত্তেফাক/এসএএস