শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে বন্ধ হতে পারে উদ্ভিদের কার্বন শোষণ: নতুন গবেষণা

আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:৫৮

দীর্ঘদিন ধরে পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে প্রাণ-প্রকৃতি। তবে প্রাণ আছে এমন সবকিছুরই একটি সহ্যের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশেষ করে উদ্ভিদ। এরা কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ এবং অক্সিজেন ছেড়ে দিয়ে গ্রহের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে গাছগুলো তাদের সহনশীলতার সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে উদ্ভিদের ক্ষমতায় পরিবর্তন আসতে পারে।

গাছপালা পৃথিবীতে জীবনের জন্য অপরিহার্য। সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে তারা কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এটি শক্তিতে রূপান্তরিত করে এবং অক্সিজেন ছেড়ে দেয়। গাছগুলো গ্রিনহাউস গ্যাস শোষণ করে, গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ে অবদান রাখে।

কার্বন শোষণে ভূমিকা ছাড়াও গাছপালা পানিচক্র নিয়ন্ত্রণ করে। এরা বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ছেড়ে দেয়, যা গ্রহকে শীতল করতে এবং আর্দ্রতার মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে। তবে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সূক্ষ্ম ভারসাম্যটি অপ্রত্যাশিতভাবে পরিবর্তন হতে পারে।

সম্প্রতি ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শন মাইকেলৎজ এক বিস্ময়কর বাস্তবতা উন্মোচন করেছেন। তার গবেষণায় দেখা গেছে, গাছপালা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পানি হারাতে পারে অতিরিক্ত তাপমাত্রা থাকলে। এটি সম্ভাব্যভাবে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গাছপালার ভূমিকাকে দুর্বল করে দেবে।

মাইকেলৎজের গবেষণা পরামর্শ দেয়, ক্রমবর্ধমান তাপের ফলে গাছগুলো কিউটিকল থেকে আরও বেশি পানি হারিয়ে যায়। প্রচণ্ড তাপে কিউটিকল যত পাতলা হয়, গাছ তত বেশি পানি হারায়। এই প্রক্রিয়াটি সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ব্যঘাত ঘটাতে পারে এবং কার্বন শোষণকে কমিয়ে আনতে পারে। এমনকি চরম জলবায়ু পরিস্থিতিতে উদ্ভিদকে 'কার্বন উৎসে' পরিণত করতে পারে।

লুকানো ঝুঁকি

নতুন অনুসন্ধানগুলো ইঙ্গিত দেয়, উদ্ভিদের কিউটিকল-ভিত্তিক পানি ঝরে যাওয়া আগের ধারণার চেয়ে উল্লেখযোগ্য বেশি হতে পারে। ড. মাইকেলৎজ বলছিলেন, যখন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, গাছপালা তাদের ছিদ্রগুলোর চেয়ে কিউটিকলের মাধ্যমে বেশি পানি হারায়। এটি তাদের কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণের ক্ষমতা কমিয়ে আনে এবং কার্বন সিঙ্ক হিসাবে এদের ভূমিকাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

চরম তাপে গাছপালা সালোকসংশ্লেষণ বজায় রাখতে লড়াই করতে পারে। এরা পানি ছেড়ে দেওয়ার সময় কম কার্বন শোষণ করে। যদি তাপমাত্রা খুব বেশি বেড়ে যায় তবে বন এবং অন্যান্য বাস্তুতন্ত্র কার্বন 'সংরক্ষণের চেয়ে নির্গমনের দিকে' স্থানান্তরিত হতে পারে। এই পরিবর্তন জলবায়ু পরিবর্তনকে বেশ ত্বরান্বিত করবে এবং বৈশ্বিক বাস্তুতন্ত্রকে ব্যাহত করবে।

ড. মাইকেলৎজ অনুমান করেছেন, ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সংস্পর্শে আসা একটি মাঝারি আকারের পাতা তার কিউটিকলের মাধ্যমে প্রতিদিন এক চা চামচের প্রায় এক তৃতীয়াংশ পানি হারাতে পারে। পুরো বনাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত এই প্রভাবটি বিশ্বব্যাপী পানি এবং কার্বন চক্রকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করতে পারে।

প্রচণ্ড তাপে গাছপালা কাজ বন্ধ করে দিতে পারে

সব গাছপালা তাপের মধ্যে একইভাবে সাড়া দেয় না। কিছু প্রজাতি চরম তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে, অন্যরা পরিস্থিতি খুব উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে ভুগতে শুরু করে।

ভ্যানকুভারে পরিচালিত একটি গবেষণায় তাপ সহনশীলতা নির্ধারণের জন্য ২০০ প্রজাতির উদ্ভিদ পরীক্ষা করা হয়েছে। মাইকেলৎজ বলেন, আমাদের গবেষণা বলছে, ৪০ থেকে ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সালোকসংশ্লেষণ দুর্বল হতে শুরু করে।

যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে তবে গাছপালা একটি গুরুতর 'ব্রেকিং পয়েন্টে' পৌঁছাতে পারে। গবেষক দলটি অনুমান করে, সর্বাধিক ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উদ্ভিদ বেঁচে থাকতে পারে। এর বাইরে উদ্ভিদ কোষের অভ্যন্তরে প্রোটিনগুলো ভেঙে যায়, যার ফলে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি এবং শেষ পর্যন্ত গাছের মৃত্যু ঘটে। যদিও কিছু মরুভূমি এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় উদ্ভিদ চরম তাপ সহ্য করার জন্য বিবর্তিত হয়েছে।

ইত্তেফাক/এসকে
 
unib