সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

স্কুলে নেই মুসলিম শিক্ষক, ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ পাঠ দিচ্ছেন হিন্দু শিক্ষক 

আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫:১৪

ফেনী শহরতলীর তুলাবাড়ীয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ পাঠ দিচ্ছেন হিন্দু শিক্ষক। বিদ্যালয়ে নয়জন শিক্ষক কর্মরত থাকলেও মুসলিম কোনো শিক্ষক না থাকায় হিন্দু শিক্ষকই বাধ্য হয়ে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে পাঠদান দিচ্ছেন। ফলে ইসলাম ধর্মের অনেক আরবি ও সূরার আয়াতের ব্যাখ্যা হিন্দু শিক্ষকের পক্ষে পড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ইসলাম ধর্মের অনুসারী কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শিক্ষা জীবনের শুরুতেই ইসলাম ধর্ম বিষয়ে ভুল শিখছেন। এতে করে মুসলমান ছাত্র-ছাত্রীদের ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে। স্কুলটিতে দীর্ঘ ১০ বছরে একজনও মুসলিম শিক্ষক না থাকায় অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৯৪৪ প্রতিষ্ঠিত ফেনী পৌরসভা এলাকায় তুলাবাড়ীয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩২৭ জনের মধ্যে মুসলমান ছাত্র-ছাত্রী ২৮ জন। এদের মধ্যে পাক প্রাথমিকে ২ জন, প্রথম শ্রেণীতে ৩ জন, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ৫ জন, তৃতীয় শ্রেণীতে ১০ জন, চতুর্থ শ্রেণীতে ৬ জন, পঞ্চম শ্রেণীতে ২ জন। 

তুলাবাড়ীয়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রশীদ বলেন, গ্রামটি হিন্দু অধ্যুষিত। এখানে হিন্দু শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশী, শিক্ষকরা সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। বিদ্যালয়ে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে পড়ানোর জন্য মুসলিম শিক্ষক না থাকায় তিনি নিজের ছেলে মেয়েকে স্থানীয় মাদ্রাসায় পড়াচ্ছেন বলে জানান। 

স্থানীয় এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রাজীব দাস বাবলু জানান, সব শিক্ষক সনাতন ধর্মালম্বি হওয়ায় ইসলাম শিক্ষায় পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে। তাই অন্তত একজন মুসলিম শিক্ষক অত্র বিদ্যালয়ে পোস্টিং দেওয়ার দাবি জানান তিনি। 

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শ্রিপ্রা রানী পাল বলেন, মুসলমান শিক্ষক না থাকায় ইসলাম ধর্ম বিষয় হিন্দু শিক্ষক ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের এবং আমাকে প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা নাসরিন কান্তা জানান, এ বিষয়ে আমরা অবগত ছিলাম না। শিক্ষা অফিসে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা চলছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল গনি জানান, নীতিমালায় কোনো হিন্দু ও মুসলমান আলাদা করে শিক্ষকদের পদায়ন করা না থাকায় বিষয়টি সুরাহা করা যাচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দ্রুত সমাধান করা হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (চলতি দায়িত্ব) ফিরোজ আহাম্মদ বলেন, আমি নতুন এসেছি, সব উপজেলা থেকে শিক্ষকদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। রমজানের পরে তা সমাধানের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নিজ ধর্মের বাইরে অন্য ধর্মের শিক্ষার্থীদের পড়াতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা বিব্রতর পরিস্থিতিতে পড়লেও এমনটি গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে নারাজ সহকারী শিক্ষকরা। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আলাদাভাবে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ না থাকা এবং পদায়নের ক্ষেত্রে ধর্মীয়বিষয়কে গুরুত্ব না দেওয়ায়- এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ফেনী জেলা শাখার সেক্রেটারি মাওলানা আবদুর রহীম বলেন, এই ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। মুসলমান শিক্ষার্থী থাকা সত্ত্বেও শতভাগ হিন্দু শিক্ষক পোস্টিং দেওয়া রহস্যজনক। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন এবং দ্রুত এই বিদ্যালয়ে মুসলমান শিক্ষক পোস্টিং দিয়ে ইসলাম শিক্ষা ও ইসলামী ভাবধারায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ঢাকার কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মহি উদ্দিন খন্দকার বলেন, আমাদের দেশের সব মুসলমান মা-বাবারই ইচ্ছা থাকে তার সন্তান পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত শিখবে ও পড়বে। কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইসলাম ধর্ম শিক্ষার ভালো শিক্ষক না থাকে না। তাই তাদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তে মাদ্রাসায় পাঠান। ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তি আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী ধরে রাখার স্বার্থে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা একান্ত আবশ্যক। অন্যথায় অদূর ভবিষ্যতে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসবে।

ইত্তেফাক/কেএইচ