সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

যুক্তরাষ্ট্রে বাড়িওয়ালার হামলায় সন্তান হারানোর ভয়াবহ বর্ণনা দিলেন মুসলিম মা

আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:৩৬

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর শহরতলিতে বসবাসকারী একজন মুসলিম মা বিচারকদের কাছে প্রথমবারের মতো বর্ণনা করেছেন, কীভাবে তাদের বাড়িওয়ালা ছুড়ি হাতে তার পরিবারের ওপর হামলা করেছিল।

তিনি আদালতে জানিয়েছেন, বাড়িওয়ালা কীভাবে তাকে ছুরি দিয়ে নৃশংসভাবে আক্রমণ করেছিল এবং অন্য ঘরে তার ছেলেকে মারাত্মকভাবে হত্যা করেছিল। তিনি তালাবদ্ধ বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন এবং ৯১১ নম্বরে কল করেছিলেন।

মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) হত্যা ও বিদ্বেষমূলক অপরাধের বিচারের জন্য ৭৩ বছর বয়সী বাড়িওয়ালা জোসেফ জুবাকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় মামলার প্রথম সাক্ষী দেন হানান শাহীন নামের ওই মা।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসলামি বিশ্বাস এবং গাজায় যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া হিসেবে জোসেফ ওই পরিবারটিকে টার্গেট করেছিল।

প্রসিকিউটরদের ডাকে আদালতে হাজির হয়ে হানান শাহীন বলেন, তিনি জরুরি নাম্বারে কল করে বলেছিলেন, 'বাড়িওয়ালা আমাকে এবং আমার বাচ্চাকে হত্যা করছে!' তিনি একাধিকবার চিৎকার করে বলেছিলেন, 'অন্য ঘরে আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলছে।'

এদিকে, শুনানির দময় জোসেফকে কোনো কথা বলতে দেখা যায়নি। উইল কাউন্টি পাবলিক ডিফেন্ডার কাইলি ব্লাটি জুরিদের প্রতিটি প্রমাণ সাবধানতার সঙ্গে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, শিকাগো থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে প্লেনফিল্ড শহরতলির যে বাড়িতে হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল, সেখানকার বাসিন্দা জোসেফ জুবা ও তার স্ত্রীর কাছ থেকে দুটি ঘর ভাড়া নিয়েছিল মুসলিম পরিবারটি।

ছেলের শরীরে ২৬ ছুরিকাঘাতের ক্ষত

উইল কাউন্টির অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টেট অ্যাটর্নি প্রসিকিউটর মাইকেল ফিটজেরাল্ড জুরিদের বলেছেন, জোসেফ তার বেল্ট হোল্ডার থেকে ছুরি বের করে পরিবারকে আক্রমণ করেছিল, তা-সহ তারা অপরাধ সম্পর্কে স্পষ্ট বিবরণ রয়েছে। ছেলেটির শরীরে ২৬টি ছুরিকাঘাতের ক্ষত ছিল।

আদালতে ভুক্তভোগী শাহীন সাক্ষ্য দেন, জোসেফের থেকে বাসা ভাড়া নেওয়ার দুই বছরে কোনো সমস্যা হয়নি। তারা বাড়িতে জোসেফদের একটি রান্নাঘর এবং বসার ঘর শেয়ারও করত।

তারপর গাজায় যুদ্ধ শুরু হলে জোসেফ শাহীনের পরিবারকে সেখান থেকে সরে যেতে বলেন। তিনি জানান, এখানে মুসলিমদের থাকতে দেওয়া হবে না। এ সময় শাহীন জোসেফকে 'শান্তির জন্য প্রার্থনা করার' আহ্বান জানান। কিন্তু জোসেফ রেগে গিয়ে তাকে চেপে ধরে ছুরিকাঘাত করেন এবং দাঁত ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেন।

শাহীন বলছিলেন, জোসেফ আমাকে বলেছিলেন, 'একজন মুসলিম হওয়ায় তোমাকে মরতে হবে।' এ সময় শাহীন ভয় পেয়ে দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে পড়েন এবং তার সারা শরীর ও রুমে রক্ত দেখতে পান। অন্য একটি রুমে ছেলের চিৎকার শুনে তিনি ৯১১ নম্বরে ফোন করেন।

আদালতে ১৫ মিনিটের রেকর্ডিং

আদালতে প্রায় ১৫ মিনিটের রেকর্ডিং চলার সময় শাহীন তার হাতে একটি টিস্যু পেপার আঁকড়ে ধরে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। আইনজীবীরা আদালতে হাসপাতালে থাকার সময়কার রক্তাক্ত ছবি দেখান।

প্রাথমিকভাবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওয়াদিয়া আল-ফায়ুমে নামে পরিচিত শাহীনের সন্তানকে হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার দেহে এক ডজনেরও বেশি ছুরিকাঘাতের ক্ষত ছিল। আর মা শাহীনেরও সুস্থ হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লেগেছিল।

এরপর ছেলেটির জানাজায় শত শত লোকঅংশ নিয়েছিল। সবাই স্মরণ করছিল, ছেলেটি দয়ালু ছিল এবং খেলাধুলা করে বেড়াত। গত জানুয়ারিতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গেও সাক্ষাৎ হয়েছিল শাহীনের।

তথ্যসূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড

ইত্তেফাক/এসকে