গতকাল দুপুর দেড়টায় বিসিবি পরিচালকদের নিয়ে ১৮তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। আড়াই ঘণ্টার সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসেন পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও ইফতেখার রহমান মিঠু। শুরুতে সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো জানান তারা। যেখানে ক্রিকেটারদের কেন্দ্রীয় চুক্তির বিষয়টি আসে। বছরের শুরুতে এই চুক্তির তালিকা প্রকাশের বদলে এই সভায় সেটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
তবে কতজন ক্রিকেটার এই চুক্তির আওতায় আসছেন এবং কারা আছেন-কিছুই জানাতে চায় না বিসিবি। এই তালিকা নিয়ে বিসিবির এমন লুকোচুরি বিভিন্ন রহস্যের জন্ম দিয়েছে। তালিকা প্রকাশ এবং সেখানে কতজন ক্রিকেটার রয়েছেন, সেটি নিয়ে বিসিবি পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেছেন, 'একটা সংখ্যা আছে, এই মুহূর্তে সেটি বলতে চাই না।'
বিসিবির এই বলতে না চাওয়া নিয়ে যে রহস্য তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে অনেকে মনে করছেন, সিনিয়র দুই ক্রিকেটারের ভবিষ্যৎ জড়িত রয়েছে। গুঞ্জন উঠেছে, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অবসরের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় কেন্দ্রীয় চুক্তি নিয়ে ধন্দে পড়েছে বিসিবি। এই দুই ক্রিকেটারের ভবিষ্যৎ গন্তব্য কেমন হবে, সেটি নিয়ে বিসিবি খুব শীঘ্রই বসবে বলে গতকাল সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়েছে। ফাহিম বলেছেন, 'ওরা অত্যন্ত অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। যেকোনো খেলোয়াড়েরই একটা সময় আসবেই তার ক্যারিয়ার শেষ করার। তাদের সঙ্গে কথা বলব এবং তাদের চিন্তাভাবনা কী, সেটি নিয়ে আলাপ হবে।'
ধারণা করা হয়েছিল, এবারের চ্যাম্পিয়নস চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মঞ্চ থেকে বিদায়ের বার্তা দিতে পারেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু এই বিষয়ে তারা কিছুই জানাননি। জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, তারা অবসরের বিষয়ে কিছুই বলেননি। বৈশ্বিক ঐ টুর্নামেন্টে নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। এরপর জাতীয় দলে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন মাহমুদাল্লাহ, তিনি এখন খেলেন শুধু ওয়ানডে। মুশফিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলেছেন, টেস্টে তার পারফরম্যান্স নিয়ে তেমন কথা না হলেও প্রশ্ন উঠেছে ওয়ানডে ফর্ম নিয়ে।
মুশফিক-মাহমুদউল্লাহকে রেখেই পরিকল্পনা সাজাচ্ছে কি না বিসিবি, এমন প্রশ্নের উত্তরে ফাহিম বলেছেন, 'খুব কঠিন প্রশ্ন। আমার মনে হয় তাদের প্রমাণ করতে হবে। তাদের বয়সের দিক থেকে বলি, তাদের ফিটনেসের দিক থেকে বলি, তাদের পারফরম্যান্সের দিক থেকে বলি-এটা আমার কল না, এটা নির্বাচকদের কল। আমার মন্তব্য করাটা ঠিক না। কিন্তু খেলাটা সহজ হবে না।' এ দিকে কেন্দ্রীয় চুক্তির তালিকা প্রকাশ না করলেও ক্রিকেটারদের বেতন ও ম্যাচ ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে ম্যাচ ফি বেশি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান ফাহিম।
পূর্বাচলের শেখ হাসিনা স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি। এই স্টেডিয়ামের নাম করা হয়েছে এনসিজি। এনসিজির পূর্ণ রূপ-ন্যাশনাল ক্রিকেট গ্রাউন্ড। এখন থেকে পূর্বাচলের স্টেডিয়ামটি এই নামেই পরিচিতি পাবে। এছাড়া গতকালের বোর্ড সভায় জাতীয় দলের কোচিং প্যানেল নিয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রধান কোচ ফিল সিমন্সসহ অন্যদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও তাদেরকেই রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ পরিকল্পনায় পরিকল্পনায় তাদেরকে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন বিসিবি পরিচালক ফাহিম ও মিঠু। সেটি ২০২৭ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত। এখনো ক্যারিবিয়ান কোচ সিমন্সের সঙ্গে কথা হয়নি বিসিবির। তবে তার বিষয়ে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে সংস্থাটি।
অন্যদিকে স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদেরও মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এর বাইরে একজন বিদেশি ফিল্ডিং কোচ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যিনি জাতীয় দলের পাশাপাশি অন্যান্য ক্রিকেটারকে নিয়ে কাজ করবেন। প্রথম শ্রেণির যে ১০০ জন ক্রিকেটারকে বেতন দেওয়া হয়, তাদের তালিকাও হালনাগাদ করেছে বিসিবি।
একাদশ বিপিএলে বকেয়া পারিশ্রমিক নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে, সেটি নিয়েও কথা হয়েছে বোর্ড সভায়। সময়স্বল্পতা ও কম ফ্র্যাঞ্চাইজির আগ্রহের কারণে কিছু ভুল-ত্রুটি হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম। ব্যর্থতার দায়ও কাঁধে চাপিয়েছেন তিনি। বিপিএলের দ্বিতীয় আসরের পর পারিশ্রমিক বকেয়া থাকার কারণে চিটাগং কিংসকে দল গড়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। সেই ফ্র্যাঞ্চাইজির অতীত ভুলে কেন তাদের এবার দল গড়ার সুযোগ দেওয়া হলো, এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি ফাহিম। সবকিছু থেকে 'বিগ লার্নিং' হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। অতীত থেকে বিসিবি কেন শিক্ষা নেয় না, সেটি নিয়েও সঠিক জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছেন একাদশ বিপিএল কমিটির সদস্যসচিব নাজমুল আবেদীন ফাহিম।