শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

রাজধানীমুখী রোগীরা: ঢাকার বাইরে মিলছে না বিশেষায়িত চিকিৎসা

আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৭:০০

সরকারিভাবে দেশের স্বাস্থ্য খাতে অবকাঠামো চোখে পড়ার মতো। বিভাগ, জেলাসহ ছাড়াও উপজেলা এবং প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে রয়েছে চিকিৎসাসেবার নানা অবকাঠামো। রোগীদের চাহিদার ৯৫ ভাগ ওষুধ এসব হাসপাতাল থেকে বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অপারেশন থিয়েটার ও এক্স-রেসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সব ব্যবস্থাই রয়েছে। তবে বেশির ভাগই যন্ত্রপাতিই বিকল, পর্যাপ্ত জনবলও নেই মাঠ পর্যায়ে। সেখান থেকো নানা অজুহাত দেখিয়ে রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সিজারিয়ানসহ ছোটখাটো অপারেশন উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে করা সম্ভব হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা করা হয় না।

মফস্সলের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে মেডিসিন, সার্জারি, গাইনির মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা থাকলেও রোগীরা এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা সেবা পান না। নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং রোগী ভাগিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বাণিজ্য রয়েছে সেখানে। এসব কারণে রোগীরা ইউনিয়ন পর্যায়ে থেকে জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় শহরে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তিতে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এসব কারণে রোগীরা সাধারণ অসুখ যেমন জ্বর, সর্দি, কাশি কিংবা ছোটখাটো অপারেশনের জন্যও ঢাকামুখী হচ্ছে। অন্যদিকে, ঢাকার বাইরে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে বিশেষায়িত ইউনিট থাকলেও জনবল ও প্রদত্ত পরীক্ষা-নীরিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় রোগীরাও সেখানে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না। এই কারণে জটিল রোগীরাও ঢাকামুখী হচ্ছে। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভিমত, রোগীদের ঢাকামুখী হওয়ার অন্য কারণও রয়েছে—যেমন কিডনি, ক্যানসার, হূদরোগ, নিউরোলজি ও নিউরোসার্জারি, গ্যাস্ট্রোলিভারসহ বিশেষায়িত চিকিৎসার উন্নত ব্যবস্থা ঢাকায় রয়েছে, যা মফস্সলে মেলে না।

মফস্সলের রোগীদের ভোগান্তি লাঘবে সরকার চিকিৎসাসেবা বিকেন্দ্রীকরণ, প্রি-অ্যাপয়েন্টমেন্ট ব্যবস্থাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আগত রোগীদের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ রোগীরই ঢাকায় আসার প্রয়োজন নেই। তাদের চিকিৎসা সেবা জেলা-উপজেলায় সম্ভব। রাজধানীর অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে আগত রোগীদের বিষয়েও একই অভিমত বিশেষজ্ঞদের। উদাহরণ দিয়ে তারা বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সব ধরনের রোগের চিকিৎসা রয়েছে। রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসা সম্ভব না হলে তখনো চিকিৎসকরা ঢাকা মেডিক্যালে রেফার করেন। রোগীদের ধারণা, ঢাকা মেডিক্যালে একবার ভর্তি হতে পারলে চিকিৎসা মিলবেই। এ কারণে ২৬০০ বেডের হাসপাতালে রোগী থাকেন সাড়ে চার থেকে ৫ হাজার। রোগীদের চাপে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ত্রাহি অবস্থা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এই হাসপাতালে আগত রোগীদের দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা এবং ভোগান্তি লাঘবে তারা বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এর একটি হলো, বহির্বিভাগের রোগীদের জন্য প্রি-অ্যাপয়েন্টমেন্ট ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে রোগীকে একটি নির্ধারিত সময় দেওয়া হবে। রোগী ফোনে জেনে নিতে পারবেন তিনি কখন এসে চিকিৎসা নিতে পারবেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের উদ্যোগ আরো দুটি হাসপাতালেও গ্রহণ করা হবে বলে জানা গেছে।

 প্রখ্যাত কিডনি বিশেষজ্ঞ ও কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ বলেন, সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৮ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এসব ক্লিনিকে শুধু ইউরিন পরীক্ষা ও ব্লাডপ্রেসার মাপলে কিডনি, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো তিনটি রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। এতে সব মিলিয়ে খরচ পড়তে পারে দেড়শ টাকার মতো। উপজেলাকেন্দ্রে এক্সরেসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নত ব্যবস্থা রয়েছে। তাই উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসা যদি সঠিকভাবে নিশ্চিত করা যায়, তাহলে রোগীদের ঢাকামুখী হওয়ার কোনো যুক্তি নেই।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, একটি উপজেলায় ৪ থেকে ৫ লাখ লোকের বসবাস। উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেডিসিন, গাইনি, সার্জারির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াও বেশ কয়েক জন মেডিক্যাল অফিসারও রয়েছেন। এক্সরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষানিরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এগুলো যদি সঠিকভাবে কাজ করে তাহলে রোগীদের ঢাকামুখী হতে হবে না। কিন্তু বেশির ভাগ উপজেলায় রোগীরা চিকিৎসাসেবা পান না। উপজেলা পর্যায়ে সরকারকে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

ইত্তেফাক/এনএন