জাতীয় দলের ফুটবলার রহমত মিয়া। জাতীয় দলে খেলার সুবাদে এখন পাঁচ তারকা হোটেলে ঘুমান। নরম বিছানায় মাথা লাগিয়ে মাঝে মাঝে হারিয়ে যান পুরোনো স্মৃতির ঘরে। ফেলে আসা স্মৃতির ঘরে হাজারও স্মৃতির কথা ভেসে ওঠে চোখে। এক সময় তার জীবনটা কঠিন অন্ধকারে ঢেকে ছিল। পরিবারে সবকিছু থাকার পরও ফুটবল খেলার স্বপ্ন পূরণ করতে ঢাকায় এসে বারান্দায় ঘুমাতে হয়েছে। অন্যের জন্য বাজার করতে হয়েছে। তবুও ফুটবল খেলতেই হবে। ছেলে রহমত ফুটবল খেলুক সেটা চাননি তার বাবা লুৎফর রহমান। ফুটবল খেলার কারণে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলেন তাকে।
রহমতের চোখে ফুটবলের হাতছানি। রঙ্গীন স্বপ্ন, ফুটবলে জীবন গড়বেন। অনেক বড় হতে হবে। কষ্ট শিকার করতেই হবে। বাড়ির বড় ছেলে হয়েও বাবা-মা পরিবার ছেড়ে মাগুরার মোহাম্মদপুর থেকে ঢাকায় চলে এসেছিলেন। ফুটবলার হওয়ার সংগ্রাম শুরু করলেন। এই শহরে নিজের আপন বলতে তখন কোথাও কেউ নেই। অচেনা শহরে এসে জীবনটাই না হারিয়ে ফেলেন, এমন আতঙ্ক কয়েকবার মনের মধ্যে উঁকি দিয়েছিল।
কিন্তু ভেঙে পড়েননি কখনো। ফুটবলে বড় ভাইদের কথায় ঢাকায় এসে সোনালী অতীত ক্লাবে গিয়েছিলেন। কোনো কারণে বড় ভাই সেই রাতে আসতে পারেননি। ধৈর্য্য না হারিয়ে সেই রাতে সোনালী অতীত ক্লাবের বারান্দায় ঘুমিয়েছিলেন। 'শীতের রাত। গায়ে দেওয়ার কিছু নেই। বারান্দাতেই থাকতে হবে। কি আর করার। ঘুমিয়ে গেলাম-বললেন রহমত মিয়া।
খেলার ব্যবস্থা ঠিক-ই হয়েছে। একটি ক্লাবে খেলার সুযোগ করতে গিয়ে ম্যানেজারকে খুশি করতে হবে। রহমত সেই ক্লাবের বাজার করার দায়িত্ব নিলেন। আর রাতে থাকতেন ম্যানেজারের বাসায়। রহমত পাইওনিয়র লিগের ক্লাবে খেলেছেন। লতিফ চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের হয়ে খেলেছেন। জুনিয়র লেভেলে ক্যাম্প করেছেন। জেএফএ কাপ ফুটবলে খেলেছেন।
রহমত মিয়া বললেন, '২০১২ আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী। ফুটবল খেলার কারণে বাবা বাড়ি থেকে বের করে দেন। চার বছর লস দিয়ে সপ্তম শ্রেণিতে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই, ২০১৩ সালে।' সেখানেই গড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়। এর পর বিএসএল খেলেছেন ওয়ারী ক্লাবে, ৪ বছর সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবে খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৬, ১৭ দলে। পেশাদার লিগের বিভিন্ন ক্লাব হয়ে গত মৌসুমে আবাহনীর অধিনায়ক হয়েছেন রহমত মিয়া। এখন ব্রাদার্সে খেলছেন রহমত।
জাতীয় দলের সঙ্গে সৌদি আরবে যেতে পারেননি, বিমানবন্দর থেকে ফেরত এসেছিলেন। কিন্তু মন খারাপ হয়নি তার। রহমত মিয়া বলেন, 'জীবনে কতো কষ্ট করেছি। তখনই মন খারাপ করিনি। এটা নিয়ে কেন কবর।'
ফুটবল দলের সঙ্গে সৌদি আরবে যাওয়ার আগে কথা হয় রহমত মিয়ার সঙ্গে। 'আমি বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতাম। আমার মন চাইতো বাইরে বাইরে ঘুরবো। খেলবো। বাবা বের করে দিলে বন্ধুদের সঙ্গে ঢাকায় চলে এলাম। আমরা যখন ঢাকায় আসি তখন হেলপ করার কেউ ছিল না। এখন জুনিয়ররা অনেক সুযোগ পায়। জীবনে কখনো ভাবিনি জাতীয় দলে খেলতে পারবো। সোনালী অতীতের বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলাম, আল্লাহ কপালে রেখেছিল এখন ফাইভ স্টার হোটেলে ঘুমাতে পারি। কখনো ভাবিনি জাতীয় দলের খেলার সুযোগ আসবে-বললেন রহমত মিয়া। ২০২২ সালে সাদিয়া ইসলামকে বিয়ে করেছেন রহমত, ঘরে এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
ইংলিশ লিগে খেলা হামজা চৌধুরী আসছে, একই দলে খেলার সুযোগ হবে। হামজাকে নিয়ে রহমত মিয়া বলেন, 'এশিয়ার সেরা ফুটবলার আসবেন। এতে আমাদের দলের শক্তি বাড়বে। আমার জীবনে এতো মাপের ফুটবলারের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুযোগ হয়নি। এটাও আমার এবং আমাদের দলের সবার জন্য সুন্দর একটি স্মৃতি এনে দেবে।'