পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীদের আপত্তির মুখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ছাত্রদল নেতা শাহরিক চৌধুরী মানিকের (২৮) লাশ কবর থেকে না তুলেই ফিরে গেছেন ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) দুপুরে মুন্সীগঞ্জ সদরের মিরকাদিমে এ ঘটনা ঘটে। এসময় ঢাকার শাহবাগ থানায় দায়ের করা ওই মামলার বাদীকেই চিনেন না বলে অভিযোগ তুলে লাশ উত্তোলনে এ আপত্তি জানায় শাহরিকের পরিবার ও দলের নেতাকর্মীরা।
এদিকে দুপুর ১২টার দিকে সদরের মিরকাদিম পৌরসভার রামগোপলপুর এলাকার ডেপুটি বাড়ি মসজিদ সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে নিহত ছাত্রদল নেতার লাশ উত্তোলনে আসেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. হামিদুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শাহরিক হত্যায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের সাইবার ক্রাইমের উইংস মো. শফিকুল ইসলাম। তারা কবর থেকে লাশ উত্তোলন করতে গেলে পরিবারের লোকজন ও দলীয় নেতাকর্মীরা আপত্তি জানান। এ সময় সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে দুপুর দেড়টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তা লাশ উত্তোলন না করেই ফিরে যেতে বাধ্য হন।
নিহত শাহরিক চৌধুরী মানিক মিরকাদিম পৌরসভার রামগোপালপুর এলাকার আনিসুর রহমান চৌধুরীর ছেলে। শাহরিক মিরকাদিম পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের কয়েকঘণ্টা আগে ঢাকার চানখারপুল এলাকায় গুলিতে নিহত হন ছাত্রদল নেতা শাহরিক চৌধুরী মানিক।
নিহত ছাত্রদল নেতা শাহরিকের বাবা আনিসুর রহমান চৌধুরী জানান, তার ছেলে হত্যার ঘটনায় যে মামলা দায়ের করা হয়েছে, সেই মামলার বাদীকে তারা চিনেন না। বাদী সম্পর্কে কোনো কিছুই জানেন না। তাছাড়া এ মামলায় আসামিদের অনেকেই রয়েছেন নিহতের বন্ধু ও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ অবস্থায় মামলার বাদীর বিরুদ্ধে আগে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন নিহতের বাবা।
তিনি বলেন, আমার ছেলে হত্যার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন মিরকাদিম পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র শহীদুল ইসলাম শাহীন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। কাজেই প্রকৃত আসামিদের এ মামলায় আনা হোক। বাদী পরিবর্তন করা হোক।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. হামিদুল ইসলাম জানান, শাহরিক হত্যার ঘটনায় ওই বছরের ১০ অক্টোবর শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন রাজু আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। এ ছাড়া ময়নাতদন্ত না করেই পরিবারের লোকজন তার লাশ দাফন করে। পরবর্তীতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন আদালত ময়নাতদন্তের জন্য শাহরিকের লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। এতে লাশ উত্তোলন করতে আসেন তারা। এ সময় স্বজনদের আপত্তি ও দলীয় নেতাকর্মীদের উত্তেজনা থাকায় লাশ উত্তোলন করা যায়নি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা মামলার বাদীকে এখনও চিহ্নিত করতে পারিনি। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা মোবাইল নাম্বারটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। বাদীর ঠিকানা সঠিক নয়। তবে বাদীকে না পেলেও মামলার তদন্ত কর্মকাণ্ড এগিয়ে যাবে।