ডেঙ্গু রোগী বাড়তে শুরু করলেই প্রতি বছর অভিযানে নামে দুই সিটি করপোরেশন। এর আগে ডেঙ্গুর জন্মস্থান ও ডেঙ্গু দমনে পূর্ব প্রস্তুতি থাকে না কারোই। এতে পরিপূর্ণ মশা মেরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে গরম। মাঝেমধ্যে বৃষ্টিও হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। এডিস মশার প্রজনন ও বংশবিস্তারের জন্য উপযুক্ত সময় এখন। এপ্রিল থেকেই এই অবস্থা আরও বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত বর্ষার আগে থেকেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। এ বছর সরকারের আরও জোরালো প্রস্তুতি প্রয়োজন। কিন্তু এ নিয়ে তেমন কোনো প্রস্তুতিই চোখে পড়ছে না।
বাংলাদেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। এর পর প্রায় দুই দশক ধরে ডেঙ্গুর বিস্তার ছিল রাজধানী ঢাকায় সীমাবদ্ধ। কিন্তু ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। এর পর প্রতি বছরই ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে দেখা গেছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে শুরু থেকেই সরকারের কার্যক্রম বেশ ত্রুটিপূর্ণ বলে অভিযোগ তুলছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এ বছর ডেঙ্গু প্রতিরোধে দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম না থাকায় এবার পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের নিশ্চিতকৃত সংখ্যা ৫৭৫। গত বছরও এপ্রিল থেকেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে দেখা গিয়েছিল। গত বছরের জানুয়ারিতে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছিল ১ হাজার ৫৫ জন। এরপর ফেব্রুয়ারি ও মার্চে এ সংখ্যা কমে আসে। এ দুই মাসে ডেঙ্গু রোগী নথিভুক্ত হয় যথাক্রমে ৩৩৯ ও ৩১১ জন। ডেঙ্গু রোগী বাড়তে শুরু করে এপ্রিল থেকে। ঐ মাসে রোগী শনাক্ত হয় ৫০৪ জন এবং তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় অক্টোবরে। দেশে অক্টোবর ও নভেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে যথাক্রমে ৩০ হাজার ৮৭৯ ও ২৯ হাজার ৬৫২ জন। এর পর ডিসেম্বরে তা নেমে আসে ৯ হাজার ৭৪৫ জনে।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ডেঙ্গুর পেছনে অপরিকল্পিত নগরায়ণও বড় দায়ী। শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এজন্য সরকারের অন্যান্য বডিকেও কাজে লাগাতে হবে। তরুণ প্রজন্মকেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাঠে নামাতে পারে সরকার। খাল-জলাশয় পরিষ্কার, মশার লার্ভা নষ্ট করার মতো কাজেও যুক্ত করতে হবে তাদের।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন বলেন, আমরা আমাদের নিয়মিত ডেঙ্গু কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এপ্রিল না হলেও জুন-জুলাইয়ে বেশি বাড়ে সেটি মাথায় রেখে আমরা আগাচ্ছি। ঈদের পর থেকে সচেতনতা কার্যক্রম শুরু করব আমরা। নতুন মশার ওষুধ টেস্ট করা হবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আপাতত আমরা আগের ওষুধ দিয়েই টেস্ট করব সেটি কার্যকারিতা হারালে আমরা নতুন ওষুধের কথা চিন্তা করব।
এ বিষয়ে জানার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরীকে ফোন দিলে তিনি ধরেননি। পরে উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমদাদুল হককে ফোন দিলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ফোন দিতে বলেন।