শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

রসিক আড্ডার রমজানের সাংস্কৃতিক আয়োজন 'বাংলার রমজান'

আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৫, ১৮:১১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অনুষ্ঠিত হলো ‘বাংলার রমজান’ উৎসব। রোববার (২৩ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে দুপুর তিনটা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলে এই উৎসব। 

রসিক আড্ডার এই আয়োজনে এবার মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিল দৈনিক ইত্তেফাক ও বণিক বার্তা। 

সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘রসিক আড্ডা’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই উৎসব বাংলার মুসলমানদের রমজান উদযাপনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রূপকে নতুন মাত্রায় তুলে ধরে। বিশ্ব মুসলিম সমাজের কাছে রমজান সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস হলেও বাংলার মানুষের কাছে এটি কেবল ধর্মীয় অনুশীলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং পারস্পরিক সহানুভূতি, মিলনমেলা ও ঐতিহ্য সংরক্ষণেরও উৎসব। বাংলার প্রতিটি অঞ্চলে রমজান বিভিন্ন বৈচিত্র্য নিয়ে আসে, বাড়ি বাড়ি ইফতার ভাগাভাগি, সেহেরির সময় প্রতিবেশীকে ডেকে তোলার সৌহার্দ্য, মসজিদের মাইকে হামদ-নাতের সুর—সব মিলিয়ে রমজান বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে মিশে আছে।

এবারের আয়োজন সেই ঐতিহ্য ও সংহতির চিত্রকে আরও বর্ণিলভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। দুপুর তিনটায় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়, যেখানে ছিল ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশনার পাশাপাশি বাংলার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক আয়োজন।

পুঁথিপাঠক মো. রফিজ উদ্দিন লোকসংস্কৃতি ও ধর্মীয় অনুভূতির মেলবন্ধন ঘটিয়ে পুঁথিপাঠ করেন। বাংলার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আরেক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ সামা মাহফিলে পরিবেশনা করেন কাওয়াল মুহাম্মদ নুরুল মুস্তফা ধূসরু, মুহাম্মদ ইরফান, মুহাম্মদ সাইমুন রেজা ও তবলা বাদক ইমন তবিব। 

মহানবী (সা.)-এর প্রশংসামূলক সংগীত ‘নাতে রাসূল’ পরিবেশন করেন দেশবরেণ্য গজল শিল্পী মহিউদ্দিন তানভীর। এছাড়া হলকায়ে জিকিরের মাধ্যমে সমবেতভাবে আল্লাহর নাম জিকির করা হয়। শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিবেশনাই নয়, রমজানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা বাংলার খাদ্যসংস্কৃতিকেও তুলে ধরা হয় এই আয়োজনে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ইফতার ও সেহেরির ঐতিহ্যবাহী খাবার প্রদর্শনীতে ছিল সিলেটের ‘আখনি’, বরিশালের ‘মলিদা’, পুরান ঢাকার ‘বাকরখানি’ ও ‘দই বড়া’, বাগেরহাটের ‘সেমাই পিঠা’, জামালপুরের ‘ছোলার পোলাও’ এবং দিনাজপুরের ‘বুট খিচুড়ি’সহ নানা ঐতিহ্যবাহী খাবার, যা দর্শনার্থীদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। 

আয়োজকরা জানান, ‘বাংলার রমজান’ কেবল একটি উৎসব নয়, এটি বাংলার সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের এক অনন্য সংযোগস্থল। ভবিষ্যতেও এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে রমজানের ভাবগাম্ভীর্য, সামাজিক সংহতি ও বাংলার সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তারা।

ইত্তেফাক/এনএন