রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

বাংলাদেশকে রপ্তানির উৎপাদন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলতে চায় চীন

আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৪:৪২

অন্যান্য দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে একটি প্রধান উৎপাদন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে চায় চীন। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশে চীনা উৎপাদন কেন্দ্র স্থানান্তরে সহায়তা করবে চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক (এক্সিম ব্যাংক)।  

চীনে সফররত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ আগ্রহের কথা জানান এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান চেন হুয়াইউ।

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।  

চেন হুয়াইউ বলেন, 'বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা চীনের কোম্পানিগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ব্যাংক দেশটিতে চীনা বিনিয়োগ ও শিল্প স্থাপনে সহায়তা করবে, যাতে বাংলাদেশকে রপ্তানি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করা যায়।'  

এক্সিম ব্যাংক এতদিন বাংলাদেশে চীনা অর্থায়িত অবকাঠামো ও জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগ করলেও, এবারই প্রথমবারের মতো দেশটিতে চীনা বেসরকারি শিল্প বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। 

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, 'বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান ও দক্ষ মানবসম্পদ দেশটিকে চীনসহ বিশ্বের শীর্ষ কোম্পানির জন্য উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।'  

তিনি আরও বলেন, 'আমি শীর্ষ চীনা উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছি। সরকার বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় সুবিধা ও একটি বাণিজ্য করিডোর গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।'

প্রধান উপদেষ্টা জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলে একটি চীনা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দ্রুত বাস্তবায়নের কাজ চলছে। বাংলাদেশ বড় আকারে নতুন বন্দরও তৈরি করছে, যা শুধু দেশীয় অর্থনীতির জন্য নয়, নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের বাণিজ্যের জন্যও সহায়ক হবে।  

চেন হুয়াইউ বলেন, চীনের অনেক কোম্পানি বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশ করছে। তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়, তবে দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ আরও উন্নত করা প্রয়োজন।  

তিনি ভিয়েতনামের উন্নয়নের উদাহরণ টেনে বলেন, 'যদি বাংলাদেশ চীনা ও পশ্চিমা বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে চায়, তবে বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা আরও শক্তিশালী করা জরুরি।'  

বৈঠকে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নের দ্রুত ছাড়করণ, প্রকল্প ব্যয় হ্রাস এবং নতুন অবকাঠামো প্রকল্পে সহায়তা চেয়ে অনুরোধ জানান।  

এ প্রসঙ্গে, দাশেরকান্দি স্যুয়েজ প্লান্টের অর্থায়নে সহায়তা ও প্রতিশ্রুতি ফি কমানোর দাবি জানান বাংলাদেশি প্রতিনিধিরা।  

জবাবে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান চেন হুয়াইউ জানান, তার ব্যাংক এসব অনুরোধ যাচাই করে দেখবে এবং ভবিষ্যতে আরও সহজ শর্তে চীনা মুদ্রা রেনমিনবিতে (আরএমবি) বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার পরামর্শ দেন।  

তিনি আরও জানান, 'উভয় দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খুব শিগগিরই পুনরায় বৈঠকে বসবেন, যাতে বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়।'  

সাক্ষাৎকালে উপস্থিত ছিলেন— বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি ও পরিবহন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। 

ইত্তেফাক/টিএইচ