শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

সবাইকে সাহস নিয়ে খেলতে বলেছিলেন হামজা 

আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৫:০২

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ খেলে ঘুমাতে রাত হয়ে গিয়েছিল। ফুটবলারদের অনেকেই গতকাল রোজা রেখেছিলেন। সাত সকালে শিলংয়ে ভিভান্তা হোটেল ছাড়তে হবে। সকাল ৭টায় সবাইকে লবিতে আসতে বলা হয়েছে। ঘুম ঘুম চোখে সবাই হাজির। বাইরে গাড়ি অপেক্ষা করছে। পুলিশ পাহারায় খেলোয়াড়দেরকে শিলংয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেওয়া হবে। ৩ ঘণ্টার পথ, যেতে সময় লাগবে। তাড়াহুড়া চলছিল। লাগেজ নামাচ্ছেন টিম বয় মহসিন। 

অন্যদিকে ঢাকা থেকে আসা সাংবাদিকরা অপেক্ষায়, সাত সকালে। পরশু রাতে শিলংয়ের জওহরলাল স্পোর্টস কমপ্লেকসের মাঠে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র হওয়া ম্যাচে এখনো স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। জিততে পারলে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় চলে যেত, আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যেত। কারণ গ্রুপের অন্য ম্যাচে সিংগাপুর ও হংকং গোলশূন্য ড্র করেছে। ভারতীয় সাংবাদিকরা বলছিলেন, 'যেভাবে বাংলাদেশ সুযোগ পেয়েছিল কাজে লাগলে তিন চার গোলে জিতে যেতে পারত।' 

টিভির পর্দায় বসে বাংলাদেশের ফুটবল প্রেমীরা হয়তো রাগে চুল ছিঁড়েছেন। ম্যাচের ৩০ মিনিটের মধ্যে চারটি সুযোগ পেয়ে নষ্ট করেছে। খেলার শুরুতেই ভারতের ওপেন নেট পেয়ে মুজিবর রহমান জনি স্বার্থপরের মতো গোল করতে গিয়ে মিস করেছেন। মাটিতে পড়েছিল ভারতীয় গোলরক্ষক, পোষ্ট ফাঁকা। বসুন্ধরা কিংসের জনি ছোট বক্সে বল ফেললে গোল হয়ে যেতো। শাহরিয়ার ইমন, মোরসালিন ছিলেন সেখানে। কিন্তু জনি গোলের খাতায় নিজের নাম লেখাতে গিয়ে দেশকে বঞ্চিত করেছেন। আবাহনীর অধিনায়ক হৃদয়ও ব্যর্থ হয়েছেন। বল পেয়ে দুর্বল গতিতে ফাঁকা পোস্টে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ভারতীয় ডিফেন্ডার গোল লাইনে এসে বল ঠেকিয়ে দিয়েছেন। 

গতকাল সকালে হোটেল লবির এক কোনায় বসেছিলেন হৃদয়। চোখে ঘুম। গোল মিসের কথা জানতে চাইলে বলেন, 'হ্যাঁ ওইটা একদম গোলের চান্স ছিল। কাজে লাগাতে পারলে আমরা ৩টা পয়েন্ট পেয়ে যেতাম।' আবাহনীর শাহরিয়ার ইমনও সুযোগ নষ্ট করে দেশকে বঞ্চিত করেছেন। গাড়িতে ওঠার সময় ইমনকে দেখা গেল না। আড়ালে আড়ালে ছিলেন। জনিকেও খোঁজ হলো। জনিও সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি না হওয়ার চেষ্টায় দ্রুত গতিতে টিম বাসে উঠে গেলেন। রাকিব হোসেন ভালো খেলেছেন। দুর্দান্ত একটা শটও করেছিলেন। কিন্তু সেই বলটা ফ্লাইটে গিয়ে গ্রিপ করে ফেলেন ভারতীয় গোলরক্ষক সাত বছর পর জাতীয় দলের ফেরা ভিশাল কাইথ। রাকিবের মুখেও শোনা গেল গোল মিসের আফসোস। 

হোটেল ছাড়ার সময় ফুটবলার নিজেদের মধ্যে খুব একটা কথা বলতে দেখা গেল না। তবে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যারাই কথা বলেছেন তাদের গোল মিসের আফসোস রয়েছে। যদিও কারো নাম নিয়ে মুখ খুলতে চান না তারা। দায়িত্ব নিয়ে খেললে ম্যাচটা ছিল বাংলাদেশের। ভারত বেঁচে গিয়েছে, বাংলাদেশের হাত থেকে। রহমত মিয়া কথা বলেছেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তপু বর্মন মাংশপেশিতে টান লাগায় মাঠ ছেড়ে গেলে, তার বদলে রক্ষণ ভাগের দায়িত্ব নেন তিনি। অধিনায়ক হয়ে মাঠে নামেন রহমত মিয়া। কেমন ম্যাচ হয়েছে, তা নিয়ে রহমতের পরিষ্কার জবাব, 'ভারতের বিপক্ষে ৩ পয়েন্ট না পাওয়ায় নিজেকে দুর্ভাগা মনে করছি।' 

রহমত মিয়া বলছেন, 'এত সহজ সুযোগ কেন কাজে লাগাতে পারবো না। এ প্রশ্ন তো আমারও।' কথা বলার সময় পেছনে দিক দিয়ে যাচ্ছিলেন অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। হামজা চৌধুরীর অভিষেক ম্যাচে বেচারা জামাল একাদশে নামা তো দূরের কথা, বদলি ফুটবলার হিসেবেও খেলতে পারেননি। ম্যাচের দিন রাতে হোটেল লবিতে বসেছিলেন। রুমে যাচ্ছিলেন না। বাইরে থেকে হোটেলে ঢুকে লবিতে জামালকে দেখে পাশে এসে বসতে দেখা যায় হামজাকে। তখনও সংবাদমাধ্যম এড়িয়ে যান তিনি। গতকাল সকালেও এটি করেছেন। শেখ মোরসালিন একাদশে খেলেছেন। ভারতের বিপক্ষে তাকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। একটা চান্সও তৈরি করতে পারেননি। সাংবাদিক দেখে মোরসালিন গাড়িতে উঠলেন মুখ ঘুরিয়ে। 

হামজা চৌধুরীর খেলা নিয়ে রহমত বলছেন সে সবাইকে সাহস দিয়েছেন। তপু বর্মন মাঠ ছাড়ার পর রহমতকে কী বলেছিলেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হামজা? রহমত জানালেন, 'হামজা অনেক সাহস দিয়েছেন।' ব্রাদার্সের ফুটবলার রহমত মিয়া বলেন, 'দেখুন হামজার মতো একজন ফুটবলার যখন আপনার দলে থাকবেন। তখন সাহস এমনিতেই বেড়ে যাবে। আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে। আমাদেরও সেটাই হয়েছিল। আমি যখন মাঠে নামলাম তখন হামজা আমাদের সবাইকে বলে দিলেন আমরা আক্রমণে থাকব। হামজা নিচে থাকবেন। আমাকে বললেন তুই অ্যাটাকিংয়ে যাবি। আমি নিচে দেখব। সবাইকে সাহস নিয়ে খেলতে বলেছিলেন হামজা। এ ধরনের কথা বললে নিজের ভেতরে কনফিডেন্স বেড়ে যাবেই।' 

রহমত কথা বলতে বলতে হামজা একটা ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে কাউকে খুঁজছিলেন। তার বাবা দেওয়ান মোরশেদ চৌধুরী, মা রাফিয়া চৌধুরী, ব্রিটিশ স্ত্রী অলিভিয়া চৌধুরী এবং তার তিন সন্তান হোটেলের গেটের সামনে গাড়িতে বসা ছিলেন। তারাও বিমানবন্দরে যাবেন। হামজা গিয়ে তার বাবাকে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে নিজে পরিবারের সঙ্গে গাড়িতে না উঠে খেলোয়াড়দের সঙ্গে টিম বাসে উঠলেন। আর অমনি পুলিশের গাড়ির পেছনে পেছনে ছুটল ভারতকে হাতের মুঠোয় পেয়ে জিততে না পারা বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। হয়তো লম্বা সময় ধরে এর আক্ষেপ পুড়াবে জামালদের।

ইত্তেফাক/জেডএইচ